সচল হচ্ছে কলকাতা, লকডাউনের পর রাস্তাতেই প্রথম অভিনীত হল থিয়েটার

অফিস থেকে বাড়ি— এই রোজগার জীবনে একটা দেওয়াল তুলে দিয়েছে করোনা। বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে যে লকডাউন চলেছে গোটা দেশ জুড়ে, তাতে সবাই ঘরের ভেতর পৃথিবীটাকে বন্দি রেখেছে। লকডাউন এখনও চলছে বটে, কিন্তু সেরকম আর মানছে না কেউই। তবে শুধু অফিস কাছারিই নয়; বন্ধ ছিল থিয়েটার, সিনেমা, কলেজ স্ট্রিট-সহ কলকাতার সাংস্কৃতিক অংশও। মঞ্চের আশেপাশে শিল্পীদের ভিড় নেই, টিকিট কাটার লাইন নেই। পড়ে আছে শুধু শুকনো পাতা আর তাদের খসখস আওয়াজ…

তবে সব অচলাবস্থারই শেষ আছে। লকডাউন না উঠলেও, শিথিল হয়েছে অনেকটা। আর সেই পরিস্থিতিতেই কলকাতার বুকে ফিরে এল নাটক। তবে থিয়েটার মঞ্চে নয়, রাস্তায় সাধারণ মানুষের মাঝে। রবিবার কলেজ স্ট্রিটের রাস্তায় পথনাটিকার আয়োজন করল নাট্যদল ‘বিসর্গ’। তুলে ধরল তাঁদের সাম্প্রতিক কাজ— ‘বাঘচাল’। 

উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে পথনাটিকাকেই আশ্রয় করেই নিজেদের কাজ করছে বিসর্গ। কথাপ্রসঙ্গে দলেরই অন্যতম সদস্য নিবেদিতা প্রহরকে জানালেন, “বিগত তেরো বছর ধরে শহরাঞ্চলটাকে একটু বাইরে রেখে আমরা নাটক করে আসছি। পৌঁছে যাই মানুষের কাছে, সেই দার্জিলিং হোক বা সুন্দরবন। তাঁদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্যই আমরা রাস্তায়, দোকানের পাশে, যেখানেই জায়গা পাই নাটক করি। এবং এটাই আমাদের একমাত্র জীবিকা। এর মাধ্যমেই আমরা নিজেদের ডান হাতটা মুখে তুলি।” 

আরও পড়ুন
পরিবেশকে শুশ্রূষা দিল লকডাউন, আবার ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেব না তো আমরা?

‘বাঘচাল’-এর মাধ্যমে কলকাতা বহুদিন পর নাটকের মুখ দেখলেও, এর আগে আরও দুটি জায়গায় আয়োজিত হয়েছে এটি। নিবেদিতা বললেন, “আমরা শেষ শো করি মার্চের ১৭ তারিখে, নদীয়ায়। তারপর লকডাউন শুরু হবার পর সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। তখনই ‘বাঘচাল’ নাটকটি লেখা হয়। ১৭ মে বরাহনগরের একটি বিয়েবাড়ি ভাড়া নিয়ে সাতজনকে নিয়ে প্রথমবার এই নাটকটি করি। এরপর শ্যামনগরের একটি বাড়ির ছাদে আমরা নাটকটি করি ৫ জুন। তারপর কলেজ স্ট্রিট।”

আরও পড়ুন
১৪টি দেশের ৩২৫ জন শিল্পী জুড়লেন গানে, লকডাউনে বিশ্বরেকর্ড ভারতীয় সুরকারের

দীর্ঘদিন পর নাটকের কাছে ফিরে আসা। বলা ভালো, নিজেদের বেঁচে থাকার কাছে ফিরে আসা। কিন্তু এখন তো নানা বাধা নিষেধ। সোশ্যাল ডিসটেনসিং মানতে হয়। সেখানে নাটকে কোনো অসুবিধা হয়নি? নিবেদিতা স্বীকার করে নিলেন সে কথা। তবে এও জানালেন, “আমরা সবাই এখন এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। শ্যামনগরে নাটকটি করার সময়ও দেখেছি যে কজন এসেছিলেন, সবাই একটা দূরত্ব বজায় রেখে বসেছিলেন। আমরা নিজেরাও সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছি। কলেজ স্ট্রিটে যখন নাটকটি আয়োজন করি, তখন আমাদের চারপাশে যে সব অসহায় মানুষরা খাবার সংগ্রহ করছিলেন, তাঁরাও দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। এমন আকালেও এই দৃশ্যগুলোই যা তৃপ্তি দেয়।”

বহুদিন পর সেই তৃপ্তির খোঁজ পেল শহর কলকাতাও। এরপর হয়ত ধীরে ধীরে মঞ্চেও শুরু হবে অভিনয়। আস্তে আস্তে দৈনন্দিন জীবনের ভেতর ঢুকব আমরা। সেই স্বাভাবিকতারই খোঁজে এখন সবাই।

Powered by Froala Editor