১৪টি দেশের ৩২৫ জন শিল্পী জুড়লেন গানে, লকডাউনে বিশ্বরেকর্ড ভারতীয় সুরকারের

লকডাউন শুধু মানুষের জীবনে ক্লান্তি আর হতাশাই নিয়ে আসেনি। সেইসঙ্গে অনেক অভিনব পরিকল্পনার সাক্ষী থেকেছে করোনার দিনগুলি। বেঙ্গালুরু শহরের গীতিকার সুরকার জাস্টিন থমাস কোনোদিন ভেবেছিলেন কি, তাঁর গান একসময় ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সম্মান পাবে? প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি 'না' জানান শিল্পী। আসলে লক্ষ্য ছিল বাকিদের থেকে অন্যরকম কিছু করার। আর সেই অন্যরকম সৃষ্টি যেন একভাবে এই সময়কে তুলে ধরে। তুলে ধরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে থাকা প্রথমসারির সৈনিকদের পরিশ্রমের কথা। আর সেই সৃষ্টির সঙ্গে খানিকটা বাড়তি পরিশ্রম তো থাকবেই।


জাস্টিন এই কাজের জন্য কোনো নির্দিষ্ট জঁরকে বেছে নেননি। তাঁর গানের ভিডিওতে মিশে গিয়েছে মেলোডি, র্যা প, এমনকি বেহালার যান্ত্রিক অনুষঙ্গ। তবে তার থেকেও বড়ো কথা, ভিডিওতে বিপুল সংখ্যক শিল্পীর উপস্থিতি। পৃথিবীর ১৪টি দেশে ছড়িয়ে থাকা ৩২৫ জন মালয়ালম শিল্পী। লকডাউনের মধ্যে গৃহবন্দি প্রত্যেকেই। না আছে স্টেজ পারফরমেন্স, না আছে স্টুডিও রেকর্ডিং। এমন সময়ে তাই জাস্টিনের অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারেননি কেউই। জাস্টিন তাঁর গান লিখে পাঠিয়েছিলেন প্রত্যেককেই। আর প্রত্যেকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিজের নিজের অংশ রেকর্ড করে পাঠিয়েছিলেন জাস্টিনের কাছে। অবশ্য পুরো কাজ শেষ হতে সময় লেগে যায় মাসখানেক। প্রত্যেকটি অংশ জুড়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও তৈরি করা, তার এডিটিং; কাজ তো কম নয়।


১৫ মে, সম্পাদনার কাজ শেষ করে জাস্টিন অনেকগুলি রেকর্ড বুকে গানের নমুনা পাঠিয়েছিলেন। তার মধ্যে ছিল ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ড, ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ড (লন্ডন), আমেরিকা বুক অফ রেকর্ডস, বেস্ট অফ ইন্ডিয়া রেকর্ডসের মতো তালিকা। আর এই মনোনয়ন জমা পড়ার ঠিক দুদিনের মাথায় খবর আসে আমেরিকা বুক অফ রেকর্ডসের তরফ থেকে। তারপর একে একে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ জাস্টিনের এই গানকে ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের স্বীকৃতি দেয়। ইউআরএফ গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড স্বীকৃতিও পায় গানটি। 


বছর চারেক আগে নতুন ধরনের ভক্তিগীতি থেকে উঠে আসা শিল্পী জাস্টিন এখন তাঁর পরিসর অনেকটাই বিস্তৃত করেছেন। তবে একটিমাত্র গানেই যে বিশ্বজয় করে ফেলবেন, ভাবতে পারেননি স্বয়ং জস্টিনও। তবে এই কৃতিত্ব শুধু তাঁর একার নয়। সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ৩২৫ জন শিল্পী এবং অসংখ্য আনুষঙ্গিক শিল্পকর্মীর। তাছাড়াও আছেন সেইসব মানুষ, যাঁদের নিরলস পরিশ্রমে ক্রমশ নিয়ন্ত্রণে আসছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। আসলে সমস্ত শিল্পই তো সময়ের সৃষ্টি। আর এই সময়ের কারিগর সেই অগণিত চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী।

Powered by Froala Editor