বাড়ছে জলস্তর, ভাসমান বাড়িই একমাত্র সমধান; ব্রিটিশ স্থপতির নকশায় নোয়ার ছাপ

টানা চল্লিশ দিন ধরে একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীর বুকে। সেইসঙ্গে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল ভূগর্ভস্থ জল। গোটা পৃথিবীই তলিয়ে গিয়েছিল জলের তলায়। মানুষ তো বটেই, প্রাণ হারিয়েছিল পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের এই গল্পটার সঙ্গে পরিচিত সকলেই। হ্যাঁ, নোয়ার কথাই হচ্ছে। নোয়ার জাহাজেই গণ-অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচিয়েছিল পৃথিবীকে। তবে বাস্তবেই পৃথিবীর পরিণতি হতে চলেছে এই পৌরাণিক গল্পের মতোই। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এ কারণে ক্রমশ গলছে মেরু প্রদেশের জমে থাকা বরফ। বাড়ছে জলস্তর (Sea Level Rising)। আর কয়েক দশক পর পৃথিবী পুরো জলের তলায় তলিয়ে না গেলেও, অসংখ্য মানুষ যে বাস্তুচ্যুত হবেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনো। এবার ভবিষ্যতের এই সমস্যার কথা ভেবেই যেন শুরু হয়ে গেল প্রস্তুতি।

উজচিচ মোরস্টি (Wojciech Morszty)। লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অফ আর্টসের এই তরুণ ডিজাইনারই এবার বানিয়ে ফেললেন ভাসমান ইয়াচ বাংলো। ভাসমান নৌকায় মানুষের বাসস্থান নতুন কিছু নয়। কাশ্মীরের ডাল হ্রদেও দেখা মেলে হাউসবোটের। অনেকটা সেভাবেই তৈরি উজচিচের ভাসমান ইয়াচ (Floating Yacht)। তবে তা আকারে বেশ কয়েকগুণ বড়ো অতিপরিচিত হাউসবোটের থেকে। বিলাসিতা কিংবা নান্দনিকতাতেও এই ইয়াচ কম যায় না কোনো অংশে। 

২০১৯ সালের কথা। ওসান কমিউনিটির হয়ে ট্রান্সপোর্টেশন ডিজাইনের কাজ শুরু করেছিলেন উজচিচ। তাঁর তৈরি ভাসমান স্থাপত্যের নকশা সেইসময়ই জিতে নিয়েছিল সম্মানজনক রেড ডট টপ পুরস্কার। পরবর্তীতে সেই চিন্তাভাবনাকেই আরও পরিণত রূপ দেন ব্রিটিশ ডিজাইনার। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, সমুদ্রে ভাসমান এই ইয়াচ-বাড়িতে পানীয় জলের চাহিদা মিটবে কীভাবে? কীভাবেই বা শক্তি পৌঁছে দেওয়া যাবে সেখানে?

উজচিচ জানাচ্ছেন, এই ধরনের ভাসমান বাংলোতে শক্তির চাহিদা মেটাবে মূলত সৌরপ্যানেল। তা একদিকে যেমন কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে আনবে দ্রুত, তেমনই কমাবে খরচও। অন্যদিকে ইয়াচের ছাদে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ও পরিস্রুতকরণের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। পানীয় জলের চাহিদা মিটবে সেখান থেকেই। 

আরও পড়ুন
অস্বাভাবিক হারে গলছে গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর, চলতি শতকের শেষে জলস্তর বাড়বে ১ মিটার

পরিসংখ্যান এবং সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন আয়ত্তে না এলে ২০৩৫ সালের মধ্যেই জলের তলায় তলিয়ে যাবে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলি। সেক্ষেত্রে বাস্তুচ্যুতদের জন্য এই ধরনের বাড়িই হয়ে উঠবে অস্তিত্ব রক্ষার একমাত্র হাতিয়ার। কারণ, ক্রমশ জনঘনত্ব বাড়তে বাড়তে একটা সময় পর বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে স্থলভাগ। পাশাপাশি, এই ধরনের ইয়াচের দাম ২ লক্ষ মার্কিন ডলারের মধ্যে থাকার জন্য, তা অনেক বেশি সাশ্রয়ীও। এমনকি সরকারের উদ্যোগে বেশ কিছু ইয়াচ নিয়ে গড়ে উঠতে পারে স্বতন্ত্র ভাসমান দ্বীপও। 

আরও পড়ুন
বাড়ছে জলস্তর, ২০৫০ সালের মধ্যেই বিলুপ্তির পথে অধিকাংশ ম্যানগ্রোভ অঞ্চল

ইতিমধ্যেই একাধিক বহুজাতিক সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে উজচিচের এই মডেল। সমান তালে চলছে এই প্রযুক্তিকে আরও আধুনিকতর এবং সাশ্রয়ী করে তোলার গবেষণার জন্য বিনিয়োগও। কারণ, আজ না হোক কাল— এই বাড়িই যে আবশ্যিক হয়ে উঠবে মানব সভ্যতার কাছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

আরও পড়ুন
মাত্র দুমাসে গলেছে ৬০০ বিলিয়ন টন বরফ, ২.২ মিমি বৃদ্ধি জলস্তরের

Powered by Froala Editor