দু-হাত হারিয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্রথম ভারতীয় হিসাবে নজির বিক্রমের

তখন মাত্র ৭ বছর বয়স তাঁর। আকস্মিকভাবেই বদলে গিয়েছিল তাঁর গোটা পৃথিবীটা। বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়েছিলেন তিনি। প্রাণ নিয়ে যমে-মানুষে টানাটানি হয়েছিল বিস্তর। শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হলেও বাদ দিতে হয়েছিল দুটি হাতই। তবে লড়াই-এর ময়দান ছাড়েননি তিনি। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। বিক্রম অগ্নিহোত্রী (Vikram Agnihotri)। এবার ভারতের প্রথম হাতহীন ব্যক্তি হিসাবে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স আদায় করে নজির গড়লেন ইন্দোরের মোটিভেশনাল স্পিকার। 

‘ভবিষ্যৎ এবং নিজের ভাগ্য তৈরি করে নিতে হয় নিজেকেই’। এমনটাই অভিমত বিক্রমের। হ্যাঁ, খুব একটা সহজ ছিল না তাঁর এই লড়াই। রীতিমতো তাঁকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল শারীরিক ও মানসিক পীড়ার সঙ্গে। লড়াই করতে হয়েছে সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গেও। তারপর এসেছে বহু-প্রতিক্ষিত জয়। আর এই গোটা সময় ধরেই তাঁর পাশে ছিলেন তাঁর বাবা-মা। 

দুটি হাত হারানোর পরেও, বিশেষভাবে সক্ষমদের স্কুলে ভর্তি হননি বিক্রম। আর নিজের ভাই-এর সঙ্গে পড়েছেন সাধারণ স্কুলেই। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত অংশ নিয়েছেন খেলায়। দাপিয়েছেন ফুটবল মাঠ। রাজত্ব করেছেন সাঁতারেও।

স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল, একদিন গাড়ি চালানো শিখবেন তিনিও। নিজেই ড্রাইভ করে যাবেন কলেজে কিংবা অফিসে। তবে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের স্কুল থেকে তাঁকে ফিরতে হয়েছিল নতমুখেই। সেটা ২০১২ সাল। বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের আইন নেই, সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রশিক্ষকরা। তবে হাল ছাড়েননি বিক্রম। এক বন্ধুর সহযোগিতায় মাঠে নিজে নিজেই গাড়ি চালানো শিখেছেন তিনি। আয়ত্ত করেছেন এক পা দিয়ে স্টিয়ারিং এবং অন্য পা দিয়ে গিয়ার ও ব্রেক নিয়ন্ত্রণের কৌশল। তবে কেবলমাত্র পায়ের মাধ্যমে গিয়ার বদল করে ভিড় রাস্তায় গাড়ি চালানো খুব একটা নিরাপদ ছিল না মোটেও। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বিক্রম। 

আরও পড়ুন
প্রতিবন্ধকতার জন্য সয়েছেন কটূক্তি, আজ দেশের কনিষ্ঠতম সিইও রাধিকা

বছর তিনেক পর ফের নতুন করে উদ্যম ফিরে পান তিনি। সেবছর ভারতে আসে স্বয়ংক্রিয় গিয়ারের প্রযুক্তি। সে গাড়িতে রয়েছে কেবলমাত্র অ্যাক্সিলেটর এবং ব্রেক। ২০১৫ সালে এমনই একটি গাড়ি কেনেন বিক্রম। তারপর শুরু হয় তাঁর আইনি লড়াই। প্রাথমিকভাবে তাঁর আবেদন খারিজ হলেও, সংবাদমাধ্যমের পাতায় প্রতিবাদের ঝড় তোলেন তিনি। তার সুবাদেই শেষ পর্যন্ত বদলায় দেশের নিয়ম। দেশের প্রথম হাতবিহীন ব্যক্তি হিসাবে লাইসেন্স পান বিক্রম। নাম তোলেন লিমকা রেকর্ডের পাতায়।

আরও পড়ুন
হাসপাতালেই ছেড়ে গিয়েছিলেন বাবা-মা, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আজ 'সেলিব্রিটি' গ্যাবে

বর্তমানে বিক্রম হয়ে উঠেছেন দেশের অন্যতম প্যারা-রেসার। অংশ নিয়ে ফেলেছেন বেশ কয়েকটি পেশাদার রেসিং প্রতিযোগিতায়। ডেসার্ট স্ট্রম মোটর র্যালিতে অর্জন করেছেন তৃতীয় স্থান। তাছাড়া ইন্দোরের জনবহুল রাস্তায় গাড়ি চালিয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার। কোনোরকম দুর্ঘটনাই ছাড়াই। ইচ্ছে থাকলে, পরিশ্রমের মাধ্যমে যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকেই জয় করা যায়— বীর-বিক্রমে তা প্রমাণ করেছেন বিক্রম। হয়ে উঠেছেন দেশের বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের অনুপ্রেরণা…

আরও পড়ুন
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই ‘সব্যসাচী’, লকডাউনে স্বপ্নপূরণ যুবকের

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More