মহিলাদের ফুটবল দল থেকে নির্বাচনের ময়দান, জাতিভেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিমা কুমারী

ফুটবলের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মহিলারা। আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে দলিত মহিলারা। উঁচু জাতের মানুষরা তাঁদের স্পর্শ বাঁচিয়ে চলেন। জীবনের সেই প্রত্যেকটা অবাঞ্ছিত আঘাতকে গুনে গুনে গোল শোধ করছেন। আর তাঁদের এভাবে ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছেন তাঁদেরই একজন। প্রতিমা কুমারী পাসোয়ান। নিজের জীবন দিয়ে তিনি বুঝেছেন, রুখে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে ফুটবলের মাঠ থেকে এবার তিনি সেই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে চললেন রাজনীতির ময়দানেও। আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ফুলওয়ারি শরিফ বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তিনিই।

প্রতিমা কুমারীর জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে চলতি বছরের শুরুতেই ‘পাল্টে দেওয়ার গল্প’ বিভাগে লিখেছিলাম আমরা। সেবারে তিনি জানিয়েছিলেন সমাজের বৈষম্যকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা। সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই রাজনীতির ময়দানে আত্মপ্রকাশ তাঁর। প্রহরকে তিনি জানালেন, “নির্বাচন তো একটা প্রতিনিধিত্বের জায়গা। সেখানে মাটির কাছে থাকা মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তো তেমনটা দেখা যায় না।” না, রাজনৈতিক দলের নেতারা এসে মানুষের সমস্যার সমাধান করে দেবে, এমনটা মনে করতে রাজি নন প্রতিমা কুমারী। তিনি বলেন, “সমাজ বদলাবে নিচের থেকেই।”

সেইসব মাটির কাছাকাছি মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করতেই এগিয়ে আসছেন প্রতিমা কুমারী। তার জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ছাতার নিচে আশ্রয় নেননি তিনি। বিশ্বাসই করেন না নেতাদের উপরে। ক্ষোভ নিয়ে বলেন, “ভোটের আগে প্রত্যেক নেতাই বলেন মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। কোথায় সেই সুরক্ষা? এই দেশে স্বাধীনতার এত বছর পরেও মহিলারা, দলিতরা কেউ স্বাধীন নন। এর দায় কার? নেতারা শুধুই ধর্মের নামে, জাতির নামে হিংসা ছড়াচ্ছেন।” অবশ্য ভোটের লড়াইতে জিতলেই যে তিনি সমস্ত ছবিটা বদলে দিতে পারবেন, সেটাও মনে করেন না তিনি। হাসতে হাসতে বলেন, “ভোটের লড়াইতেও হার-জিত থাকবেই। আর এই লড়াই তো শুধু ভোটে জেতার লড়াই নয়। শুধু নেতাদের বুঝিয়ে দিতে হবে, আমরা তোমাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার জন্য জন্মাইনি।”

প্রতিমা কুমারী আরও বলছিলেন, “সমাজকে বদলাতে গেলে সবার আগে শিক্ষার প্রয়োজন। রাষ্ট্রনেতারা চাইলে সেটা নিশ্চিত করতে পারতেন। আমি জিতলে সেটুকু দায়িত্ব নেব। শিক্ষাই বদলে দিতে পারে সমাজের মানসিকতা। আর সেই বদলই আগামীদিনের রূপরেখা তৈরি করবে।” এরপর পারা না পারার উত্তর দেবে ব্যালট বাক্সই। নির্বাচনী প্রচারের অর্থ সংগ্রহের জন্যও ভরসা রেখেছেন মানুষের উপরেই। কোনো দলীয় পতাকার ছত্রছায়ায় না গিয়ে, সামান্য আর্থিক সঙ্গতি নিয়ে যে লড়াই শুরু করেছেন তিনি, সেটা নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বের দাবি রাখে। বিধানসভা নির্বাচনের মতো একটা লড়াইতে নেমেছেন শুধুই মানুষের ভালোবাসাকে পাথেয় করে।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More