মহাজাগতিক বর্জ্য দিয়েই তৈরি হতে পারে পৃথিবীর নিজস্ব বলয়

ছোটোবেলার বিজ্ঞান বইতে শনির বলয় দেখে অবাক হননি, এমন মানুষ পাওয়া শক্ত। কিন্তু পৃথিবীরও যদি এমন একটা বলয় থাকত! এমন কল্পনাও হয়তো করে থাকবেন কেউ কেউ। তবে আর কল্পনা নয়। এবার সত্যি সত্যিই পৃথিবীর নিজস্ব বলয় তৈরি হতে চলেছে। অন্তত তেমন পরিকল্পনার কথাই জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ উটাহ-র গবেষকরা। সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এক গবেষণাপত্র। মহাকাশে ভাসমান বর্জ্য এবং তার ফলে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা মোকাবিলার জন্যই পৃথিবীর (Earth) নিজস্ব বলয় (Ring) তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বলা বাহুল্য, এই বলয় শনির মতো প্রাকৃতিক নয়। বরং মহাজাগতিক বর্জ্য দিয়েই তৈরি হবে এই বলয়।

পরিবেশ দূষণ যদি এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা হয়, তাহলে মহাজাগতিক দূষণও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষ এর কুপ্রভাব এখনই টের পাচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু মহাকাশ অভিযানের সামনে এই আবর্জনাগুলি এক বড়ো সমস্যা। এদের গতিপথ নির্দিষ্ট নয়। যে কোনো মুহূর্তে চলমান মহাকাশযানে সামনে এসে পড়তে পারে এইসব আবর্জনা। আর তখন দুর্ঘটনা এড়ানোর আর কোনো উপায় থাকে না। ১৯৫৭ সালে মহাকাশে পাড়ি দেয় মানুষের তৈরি প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক। এরপর থেকে একের পর এক কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশেই অকেজো হয়ে গিয়েছে। বহু মহাকাশযান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের খণ্ডাংশ মহাকাশেই ভেসে বেড়াচ্ছে। গত এক দশকেই ৭৫০০ মেট্রিক টন মহাজাগতিক আবর্জনা ছড়িয়েছে।

এই সমস্যার সমাধান করতেই এবার অভিনব গবেষণা করেছিলেন উটাহ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি থেকেও সমর্থন পেয়েছে এই গবেষণা। বিজ্ঞানীদের দাবি, আধুনিক চৌম্বক বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এই সমস্ত আবর্জনা এক জায়গায় নিয়ে আসা যায়। এমনকি অচৌম্বকীয় পদার্থদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আধুনিক চৌম্বক বিজ্ঞান। আর এভাবেই সমস্ত আবর্জনা নিয়ে পৃথিবীর চারপাশে একটা বলয় তৈরি করা যায়। তবে এই বলয় তৈরি হলে সূর্যের আলোর একটা অংশ পৃথিবীতে আসতে বাধা পাবে। তার প্রভাব কতটা পড়বে, সেটা নিয়ে নিশ্চিত না হয়ে এখনই এই পরিকল্পনাকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নন অনেকেই। আপাতত এটি কেবল পরিকল্পনার স্তরেই রয়েছে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা মহাকাশচারী হিসেবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে জেসিকা