বিসর্জনের শেষেই বোধন! দশমীর শেষে আরেক দুর্গাপুজোর গল্প

উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ থানার ১৩ নম্বর কলমাবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিমপুর (Khadimpur) গ্রাম। জায়গাটি রায়গঞ্জ থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে। জনশ্রুতি হল, প্রায় ৫০০ বছর আগে, দশমীর দিন, এক প্রাণঘাতী ঝড়ে বহু মানুষ মারা যায়। ধ্বংস হয় বাড়িঘর। নষ্ট হয় ফসল। সেই থেকে নিষ্কৃতি এবং নিরাপত্তার আশায় খাদিমপুরের গ্রামবাসীরা বলাইচণ্ডী দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই শুরু। প্রথা অনুযায়ী, দুর্গা ‘দশমী’র দিন থেকে খাদিমপুর গ্রামে শুরু হয় আরেক দুর্গাপুজো।

১৫০০ পরিবারের প্রায় ৭,৫০০ সদস্য আড়ম্বরের সঙ্গে শামিল হন এই পুজোয়। গ্রামবাসীরাও দশমীর পরের এই দুর্গাপুজোকে ঘিরে নতুন জামাকাপড় কেনেন। বলাইচণ্ডী দুর্গাপুজোয় সেজে ওঠে গোটা খাদিমপুর।

প্রতিবছর যখন বাংলার ঘরে ঘরে দশমীর পর উমার বিদায়ে বেজে ওঠে করুণ ঢাকের সুর। বিজয়ার অভিবাদন। সেই রাতেই খাদিমপুর গ্রামে বেজে ওঠে মঙ্গল আরতির শঙ্খ। বোধন এবং শুরু হয় বলাইচণ্ডী দুর্গাপুজো। পুজোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গ্রামবাসীরাও খুব আনন্দে পুজোর দিনগুলি উপভোগ করেন। সাত দিনব্যাপী একটি মেলা বসে পুজো উপলক্ষে। মেলাটি চণ্ডীমেলা বলে খ্যাত।

বলাইচণ্ডী চতুর্ভুজা। সিংহ তাঁর বাহন। সঙ্গে আলো করে থাকেন সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক এবং গণেশ। থাকেন না মহিষাসুর এবং তাঁর মহিষ। অর্থাৎ দেবী এখানে অসুর দলনী নন। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বলাইচণ্ডী পুজোতেই গ্রামের মঙ্গল। দশমীর রাত থেকে পুজো শুরু হয়ে চলে পাঁচ দিন। এই সময়টা নিরামিষ ভোজন আহার করেন সকল গ্রামবাসী। পশুবলিও এই পুজোর একটি অঙ্গ।

আরও পড়ুন
সংস্কারের অপেক্ষায় বালি-দেওয়ানগঞ্জের শতাব্দী প্রাচীন টেরাকোটার দুর্গামন্দির

এখানে দেবীর উগ্র রূপের পরিবর্তে তার সৌম্য রূপকে পুজো করা হয়। বংশ পরম্পরায় পুরোহিতরা করে আসছেন পুজো। ঐতিহ্য অনুযায়ী, এলাকাবাসীরাই একত্রে পুজোর পুরো খরচ বহন করেন। বাইরের কারো কাছ থেকে অনুদান নেওয়া হয় না। এখানে একটি কবুতরসহ পাঁচশো পাঁঠা বলি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন
নিজবালিয়ায় দুর্গা পূজিত হন সিংহবাহিনী রূপে

দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে খিচুড়ি, মিষ্টি ও ফল বিতরণ করা হয়। পুজোর পর পুরনো মন্দিরের পাকুড় গাছের নিচে প্রতিমা থাকেন গোটা বছর। এলাকাবাসীরা গোটা বছর ওখানেই পুজো করেন বলাইচণ্ডীর। পরের বছর বিশ্বকর্মা পুজোর এক দিন পর দেবী যান বিসর্জনে। একই দিনে নতুন প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। মৃৎশিল্পীরা সেই প্রতিমা নির্মাণ করেন বংশ পরম্পরায়।

Powered by Froala Editor