১। একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাব
দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাটের প্রায় কেন্দ্রে অবস্থিত এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য তার সাবেকিয়ানা। এই থিম পুজোর জোয়ারেও গা ভাসায়নি একডালিয়া। এবারের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে সিমলার কাছে সোলানের জালোটা নামক শিব মন্দিরের আদলে। প্রতিমা শিল্পী সনাতন রুদ্র পাল। এবছর এরা ৭৭ বছরে পদার্পণ করল।
২। সিংহী পার্ক
দক্ষিণ কলকাতার এই পুজো এবার ৭৮ বছরে পদার্পণ করল। এবারের ভাবনা – ‘সুন্দর পটে তব বরাভয় ও আশ্বাস। আনবে শান্তি - সুখ আমাদের বিশ্বাস।’ সৃজনে রয়েছেন মিঠুন দত্ত। সাবেকি প্রতিমার সাথে এখানে যুক্ত হয় রঙিন অভিনব সাজ। প্রতিমা নির্মাণ করেছেন প্রদীপ রুদ্র পাল৷ অনবদ্য আবহ সঙ্গীতে রয়েছেন পণ্ডিত শুভেন চট্টোপাধ্যায়।
৩। ত্রিধারা অকালবোধন
এবার ৭৩ বছরে পা দিল এই পুজো। এবারের বিষয় 'দৃষ্টিকোণ'। এই বিষয়ের মাধ্যমেই সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন তারা। অনুপম রায়ের গলায় আবহ সঙ্গীতটি তারই পরিপূরক, যেখানে বলা হচ্ছে - 'তুমি লাল দেখলে লাল, তুমি নীল দেখলে নীল / আসল কথা মানুষের সাথে মানুষেরই মিল'। সমগ্র মণ্ডপটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরণের চিত্র, একদিকে থেকে দেখলে যেখানে মানুষের ছবি ধরা পড়ে, অন্যদিক থেকে দেখলে সেখানেই চোখে পড়বে দেবীর মুখ। শিল্পী হলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গৌরাঙ্গ কুইলা।
৪। সন্তোষপুর লেকপল্লী
সন্তোষপুরের এই পুজোর বয়স ৬২ বছর। এদের এবারের থিম ভাবনা ‘পৃথিবী আবার শান্ত হবে’। রূপায়ণে রয়েছেন শিল্পী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন রকমের পলিথিন জাতীয় পদার্থ। রয়েছে পরিবেশের প্রতি গঠনমূলক বিভিন্ন শ্লোগান। ‘হাঁস’ এই মণ্ডপে স্বচ্ছ প্রকৃতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিমাটিও এই থিমের সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।
৫। কেন্দুয়া শান্তি সংঘ
গড়িয়া পাটুলি উপনগরীর খুব কাছেই কেন্দুয়া শান্তি সংঘের পুজো। এদের এবারের বিষয় ‘স্মৃতিটুকু থাক’। আমাদের শৈশবের খেলার নানা উপকরণ এখন অতীত, সেই সমস্ত বিস্মৃত খেলা এবং অভিজ্ঞতার স্পর্শকেই রূপ দিয়েছেন তাঁরা। মণ্ডপে রয়েছে কুমিরডাঙা, চাইনিজ চেকার, লুডো প্রভৃতি খেলার নানারকম মোটিফ। মণ্ডপ এবং প্রতিমার রূপায়ণে শিল্পী রণজিৎ বিশ্বাস।
৬। বাবুবাগান সর্বজনীন
ঢাকুরিয়ার বাবুবাগানের পুজো এবার পা দিল ৫২ তম বর্ষে। এবারের থিম ‘শান্তিরূপেণ সংস্থিতা’। সমস্ত মণ্ডপ সেজে উঠছে পটচিত্রে। শিল্পী সুজাতা গুপ্তের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২৫ জন পিংলার পটচিত্রের শিল্পী এই মণ্ডপ গড়ে তুলেছেন। দেওয়া হয়েছে পরিবেশ রক্ষার বার্তা। মাতৃমূর্তিটি অভিনব, তিনি উর্ধমুখী হয়ে শঙ্খ বাজাচ্ছেন, আর তাঁর মুখ দেখা যাচ্ছে আয়নায়। দর্পণে প্রতিমা দর্শনের এই ভাবনা বেশ অভিনব।
৭। যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লী
এই পুজোর এবারের বিষয় ‘জাগরণ’। এ কোনো প্রাণীর জাগরণ নয়, শিল্পের জাগরণ। খুব তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ের মধ্যেও কীভাবে শিল্প জেগে ওঠে, তারই আভাস দিতে চেয়েছেন শিল্পী প্রসূন ঘোষ। মণ্ডপ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ইটের টুকরো, বালি, পোড়ামাটুর টালি, কাঠ প্রভৃতি সামগ্রী। প্রতিমাতেও আছে অভিনবত্ব। প্রতিমার মধ্যে একই রূপে মিশে আছে দুর্গা, কৃষ্ণ এবং কালীর মূর্তিভাবনা। ঈশ্বর এক এবং অভিন্ন, সেই ভাবনা থেকেই এমন সৃজন।
৮। নাকতলা উদয়ন সংঘ
নাকতলার এবারের বিষয়ভাবনা ‘জন্ম’। রূপায়ণে রয়েছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার৷ গোটা মণ্ডপটিতেই একটি বিশেষ যান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিমা এখানে অধিষ্ঠান করছে জলের ওপর, সেই জলে নানা আকারের মাটির কলসির মুখ একবার বন্ধ হচ্ছে, একবার খুলছে৷ শিল্পীর ভাষায়, যেহেতু নিজের জৈবিক জন্মের ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই এখানে দেখানো হয়েছে মানুষের চেতনার ‘জন্ম’-কে। চেতনা হারালেই সৃষ্টি হয় অসুরের৷ অসুরের মূর্তিটিকেও সাদা স্বচ্ছ পর্দায় ঢেকে তাকে মানুষের অবচেতনের অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন শিল্পী।
৯। হিন্দুস্তান পার্ক
হিন্দুস্তান পার্কের এবারের ভাবনা ‘নবরস’। শিল্পী অনির্বাণ দাশ। গোটা মণ্ডপ পরিকল্পনায় শিল্পের ক্ষেত্রে রসের ধাপগুলি ফুটে উঠেছে। রয়েছে নৃত্যরত মানুষের অনুভূতির চিত্র। কার্যত রসের স্থান মানুষের মনে। মূকাভিনয়ের মতো অভিব্যক্তিনির্ভর শিল্পের নিদর্শন তাই শিল্পী ব্যবহার করেছেন। রয়েছে নাট্যশাস্ত্র মতে রসের অধিষ্ঠাতা নানা দেবতার চিত্র। প্রতিমাটি একটি ত্রিনয়নের অবয়বের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে৷
১০। সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক
এবার ৭০ তম বর্ষে পড়ল সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কের পুজো। শিল্পী অসীম পালের তত্ত্বাবধানে সেজে উঠেছে মণ্ডপ৷ এবারের বিষয় ‘বিস্মৃতি’। বিভিন্ন প্রজন্মে আমাদের সকলের জীবন থেকেই অনেক কিছু হারিয়ে গেছে, হয়তো চলে গেছে বিস্মৃতির অতলে। সেই সব অতীতকেই মণ্ডপে প্রত্যক্ষ করা যাবে। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে লোহার তৈরি বিভিন্ন আকৃতি, পুরনো টাইপ-রাইটার, গ্রামাফোন, পুরনো ক্যামেরার মডেল ইত্যাদি।