অ্যাঞ্জেলিনার ঝুলি থেকে চার্চিলের ছবি, বিক্রিতেও ‘রেকর্ড’

সম্প্রতি অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সংগ্রহ থেকে একটি ছবি নিলামে বিক্রি হয়ে গেল। আর তার দাম শুনে অবাক সকলেই। ১১.৫ মার্কিন ডলারের থেকেও বেশি দামে বিক্রি হল মরক্কোর একটি মসজিদের ছবি। আর তার থেকেও বেশি আশ্চর্যের কথা, যাঁর তুলির টানে ছবিটি তৈরি হয়েছে, তিনি কিন্তু ইতিহাসে চিত্রকর বলে মোটেও পরিচিত নন। তিনি উইনস্টন চার্চিল। হ্যাঁ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যিনি ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই উইনস্টন চার্চিল। তবে রাজনীতির বাইরেও যে তাঁর এক শিল্পী সত্তা ছিল, সে খবর আর কজনই বা রাখেন?

লন্ডনের নিলাম সংস্থা ক্রিস্টিজ যখন ছবিটির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়, তখনও ভাবতে পারেননি তার দাম এতটা উঠবে। আর যাই হোক, পৃথিবী বিখ্যাত চিত্রকরদের নামের তালিকায় অবশ্যই চার্চিলের কোনো জায়গা নেই। ইতিপূর্বে তাঁর যে ছবিটি সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল, তার দাম উঠেছিল মাত্র ১.৮ মিলিয়ন পাউন্ড। মরক্কোর এই মসজিদের ছবিটি ১.৫ মিলিয়ন থেকে বড়জোর ২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত উঠবে বলেই মনে করেছিলেন ক্রিস্টিজের আধিকারিকরা। কিন্তু বাস্তবে ছবিটি বিক্রি হল ৮.২ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি দামে। মার্কিন মুদ্রায় যা ১১.৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

ছবিটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসও। সম্ভবত যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই একটি ছবিই শেষ করেছিলেন উইনস্টন চার্চিল। তখন নাৎসি আক্রমণে ইংল্যান্ড পুরোপুরি বিপর্যস্ত। নানাভাবে জার্মানিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা চললেও শেষ পর্যন্ত জয়ের কোনো আশাই দেখা যাচ্ছে না। ঠিক এরকম সময়ে, ১৯৪৩ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হল কাসাবলাঙ্কা সম্মেলন। আর সেখানেই চার্চিল এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের মধ্যে চুক্তি সাক্ষর হল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে খাতায়-কলমে যোগ দিল আমেরিকা। মার্কিন-ইংরেজ জোটের কাছে যে জার্মানিকে হারতেই হবে, সে-বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন দুজনেই।

কাসাবলাঙ্কা চুক্তির পর একসঙ্গে ছুটি কাটাতে মরক্কো গেলেন চার্চিল এবং রুজভেল্ট। রাজনৈতিক মিত্রতা ততদিনে ব্যক্তিগত সম্পর্কের রূপ নিয়েছে। রুজভেল্টকে মরক্কোর অপরূপ সৌন্দর্য, বিশেষ করে সূর্যাস্তের চেহারা দেখালেন চার্চিল। আর সেই ছুটির শেষে স্মৃতি হিসাবে উপহার দিলেন একটি ছবি। সূর্যাস্তের কোমল আলো গায়ে মেখে মরক্কোর একটি মসজিদের ছবি। অবশ্য রুজভেল্টের মৃত্যুর পরেই সেই ছবি নিলামে বিক্রি করে দিয়েছিলেন তাঁর ছেলে। এরপর নানা হাত ঘুরে ২০১১ সালে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এবং ব্র্যাড পিটের সংসারে জায়গা পায় ছবিটি। তবে এর পরেই দুই তারকার মধ্যে সম্পর্ক অবনতির দিকে এগোতে থাকল। ২০১৬ সালে দুজনে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং আইনি বিচ্ছেদ হল ২০১৯ সালে। তাঁদের সংগ্রহে যে অসংখ্য ছবি ছিল, তা ভাগ হয়ে গেল। চার্চিলের আঁকা ছবিটি পেলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। আর তাঁর কাছ থেকেই সেটি বিক্রি হল রেকর্ড মূল্যে। অনেকেই অবশ্য জানতে চাইছেন, শেষ পর্যন্ত কার হাতে যেতে চলেছে ছবিটি। তবে ক্রিস্টিজের তরফ থেকে এখনও ক্রেতার নাম জানানো হয়নি।

আরও পড়ুন
বিপর্যয়ের এক মাস আগে থেকেই শুরু হয়েছিল ধ্বংসযজ্ঞ, উত্তরাখণ্ডের ছবি প্রকাশ করল নাসা

Powered by Froala Editor