কয়েকদিন ধরেই ভালো যাচ্ছিল না শরীরটা। নিজ-ডাক্তারিতে কিছু ওষুধ খেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি কিছুই। অগত্যা চিকিৎসকের কাছে দ্বারস্থ হওয়া। পরীক্ষা করার পর প্রেসক্রিপশন (Prescription) এগিয়ে দিলেন তিনি। এবার অবাক হওয়ার পালা। তাতে লেখা রয়েছে সামান্য দু-একটি ওষুধের নাম। আর সঙ্গে বড়ো বড়ো করে লেখা, প্রকৃতিযাপনের অভ্যেস করতে হবে প্রতিদিন। চিকিৎসক এবার মশকরা শুরু করলেন নাকি?
না, মশকরা নয়। স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি রয়েছে প্রকৃতির হাতেই। এমন একটি কথা তো চলে আসছে বহু যুগ ধরেই। একটা সময় স্রেফ স্বাস্থ্য ঠিক করতেই দার্জিলিং কিংবা মধুপুর-দেওঘরে হাজিরা দিতেন বাঙালিরা। এবার ক্লিনিকালি সেই পথেই হাঁটলেন কানাডিয়ান (Canada) স্বাস্থ্যবিদরা। অভিমত দূষণমুক্ত পরিবেশে কিছুদিন কাটালে মানবদেহে নিজেই নিজের ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারে অনেকটা। তাতে বাড়তি ওষুধের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। সঙ্গে এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কাও নেই কোনো।
বিগত কয়েক বছর ধরেই কানাডার চিকিৎসকরা সরব হয়েছিলেন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রকৃতিযাপনের পরামর্শকে ক্লিনিকালি বৈধ ঘোষণার জন্য। ২০২০ সালে চিকিৎসকরা গড়ে তোলেন ‘পার্ক প্রেসক্রিপশন কানাডা’ নামের একটি সংগঠনও। অবশেষে দোরগোড়ায় এসে হাজির হল সেই সুদিন। শেষ পর্যন্ত শিলমোহর চাপল চিকিৎসকদের এই উদ্যোগে। সেইসঙ্গে চিকিৎসকদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে অভিনব এক পদক্ষেপও নিল কানাডার প্রশাসন।
কানাডার বিসি, ম্যানিটোবা, সাসকাচোয়ান ও অন্টারিও প্রদেশের হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মীদের লাইসেন্স দেওয়া হল ‘প্রকৃতিযাপন’ প্রেসক্রাইব করার। সেই প্রেসক্রিপশন দেখালেই রোগীদের বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে কানাডার সংরক্ষিত পার্কগুলিতে। সাধারণত, এই পার্কে প্রবেশের জন্য ৭২ ডলারের বার্ষিক পাশ ক্রয় করতে হয় প্রাপ্তবয়স্কদের। তবে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন থাকলে অবাধেই মিলবে প্রবেশাধিকার। সবমিলিয়ে এই তালিকায় রয়েছে ৪০টি জাতীয় উদ্যান, জাতীয় ঐতিহাসিক স্থান এবং সামুদ্রিক সংরক্ষিত অঞ্চল।
আরও পড়ুন
রহস্যময় স্নায়ুরোগে আক্রান্ত কানাডার শতাধিক মানুষ, নিশ্চুপ প্রশাসন
তবে এখানেই শেষ নয়। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে আরও একটি দাবি প্রস্তাবিত করেছে কানাডার চিকিৎসক সংগঠনটি। আয়তনের দিক থেকে দেখতে গেলে কানাডা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ফলে, সেখানে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াতও খুব সহজ নয়। কাজেই সুস্থতার কারণে প্রকৃতিযাপনের জন্য রোগীদেরও বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তাতেও সন্দেহ নেই কোনো। সেই কারণেই রোগীদের জন্য বিশেষ গণপরিবহনের বন্দোবস্ত করার আর্জি জানাচ্ছে কানাডিয়ান চিকিৎসক সংগঠনটি। এখনও পর্যন্ত তাকে সবুজ সংকেত দেয়নি কানাডার প্রশাসন। তবে সেই সুদিন আসতে খুব বেশি দেরি নেই বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা…
আরও পড়ুন
‘রিয়েল এস্টেট’ দ্বীপে সংরক্ষিত অরণ্য কানাডার বৃদ্ধের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কানাডার হিমায়িত লেকের ওপর ভাংড়া নাচ প্রবাসী ভারতীয়ের, কারণ কী?