গাঁজায় বিনিয়োগ ব্যর্থ, আশাহত কানাডার ব্যবসায়ীরা

গাঁজা, প্রকৃতির বুকে স্বাভাবিকভাবে জন্মানো মাদক। তবে তাই নিয়ে আজও সারা পৃথিবী জুড়ে বিতর্কের শেষ নেই। সামাজিকতা, মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতির প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনই এর সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে অর্থনীতির প্রশ্নও। তাই আজ থেকে ৩ বছর আগে কানাডায় গাঁজার ব্যবহার আইনি স্বীকৃতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গড়ে উঠেছিল নতুন ব্যবসায়িক পরিকাঠামোও। কিন্তু তিন বছর আগে যে আশা নিয়ে ব্যবসা শুরু হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কানাডায় গাঁজার ব্যবসা সাফল্য তো পায়নি, বরং হাজার হাজার বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

২০১৮ সালের আইনি সংশোধনীতে স্পষ্ট জানানো হয়, বিনোদনের জন্য গাঁজার ব্যবহার আর বে-আইনি নয়। এর আগে আমেরিকার বেশ কিছু স্টেটে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী গাঁজার ব্যবহার আইনি স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু বিনোদনের জন্য গাঁজার ব্যবহারে ছাড়পত্র দেওয়া সত্যিই এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ ছিল। তার সবচেয়ে বড়ো কারণ, এবার এই মাদককে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের আওতাতেও আনা যাবে।

আইনি স্বীকৃতি পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই কানাডা জুড়ে তৈরি হল বেশ কিছু নতুন সংস্থা। এগুলি প্রত্যেকটিই মাদক প্রক্রিয়াকরণের ব্যবসা। বিরাট বিরাট জমিতে শুরু হল গাঁজার চাষ। এমনকি তাকে একেবারে ব্যবহারোপযোগী করে তবেই বাজারজাত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বিপুল বিনিয়োগ আসতে শুরু করে এইধরণের ব্যবসায়। কোনো কোনো সংস্থা তো কানাডার স্টক মার্কেটের প্রথম সারিতেও উঠে আসে। কিন্তু চারাগাছ থেকে নেশার উপযুক্ত গাঁজা তৈরি হতে যে সময় লেগেছে, তার মধ্যেই ব্যবসা ধসে পড়েছে অনেকটাই।

মূলত গাঁজার চাহিদা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের ভুল ধারণার জন্যই ব্যবসা সাফল্য পেল না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিনিয়োগকারীরা মনে করেছিলেন, আইনি স্বীকৃতি পেলে মানুষের মধ্যে গাঁজা সেবনের প্রবণতা আরও বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যাঁরা গাঁজাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, তাঁরাও নিয়মিত এই ড্রাগ সেবন করেন না। তাছাড়া বিনিয়োগ যখন শুরু হয় তখন মহাদেশের মধ্যে কানাডাই ছিল গাঁজার একমাত্র উৎপাদক। কিন্তু এর মধ্যেই প্রতিযোগিতায় নেমে গিয়েছে মেক্সিকোও। সব মিলিয়ে ব্যবসায়িক ক্ষেত্র রীতিমতো লোকসানের মুখে।

আরও পড়ুন
গঞ্জিকাসেবন ‘অপরাধ’ নয়, অর্থনীতির হাল ফেরাতে মারিজুয়ানাই হাতিয়ার নিউ ইয়র্কের

লক্ষ লক্ষ ডলারের বিনিয়োগ বাঁচাতে ইতিমধ্যে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন অনেকে। তবে কানাডা সরকারের মতে, তাঁরা নেশাকে কেন্দ্র করে আইনি জটিলতা বন্ধ করতেই আইনে পরিবর্তন এনেছিলেন। এর অর্থ এই ছিল না যে সরকার নেশার পক্ষে সওয়াল করবে। গাঁজাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তারও ভুল ব্যাখ্যা করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এমনটাই মত সরকারের। এই মন্দার সময় পেরিয়ে কানাডার মাদক ব্যবসা ফের কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারবে কিনা, জানেন না কেউই।

আরও পড়ুন
গাঁজা টানার ক্ষমতা অনুযায়ী দেওয়া হত নাম, পুরনো কলকাতার গঞ্জিকা সেবনের ইতিহাস এমনই

Powered by Froala Editor