ঘনিয়ে আসছে মহাবিপর্যয়, বাঙ্কারে আশ্রয় খুঁজছেন বিলিয়নেয়াররা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বদের সুরক্ষা প্রদান করতে গোটা ইউরোপজুড়ে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য বাঙ্কার। মাটির তলায় মিলিটারিগ্রেড স্টিল এবং কংক্রিটের তৈরি সেইসব আশ্রয়কেন্দ্র আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যুদ্ধ শেষের পর ফুরিয়ে গিয়েছিল তাদের প্রয়োজনীয়তা। তবে একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে বাঙ্কারের (Bunker) চাহিদা। মহাবিপর্যয় (Apocalypses) থেকে বাঁচতে বিলিয়নেয়াররা (Billionaires) মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছেন এইধরনের সুরক্ষাকবচে। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল রিপোর্টে। 

সাম্প্রতিক সময়ে গোটা বিশ্বের কাছেই একটা বড়ো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। বন্যা থেকে শুরু করে দাবানল কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ ক্রমশই বেড়ে চলেছে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে। পাশাপাশি ভূমিকম্পের প্রবণতাও ক্রমশ বাড়ছে বলেই অভিমত ভূবিজ্ঞানীদের একাংশের। অন্যদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব, জঙ্গিহানা কিংবা মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ও রয়েছে। হাইরাইযে বিলাসবহুল জীবনযাপনের সুযোগ থাকলেও, এইসব দুর্যোগ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আর সেই কারণেই বাঙ্কারের অনুসন্ধান শুরু করেছেন পৃথিবীর প্রথম সারির ধনী ব্যক্তিরা। এমনকি চালু হয়েছে ‘অ্যাপোক্যালিপস’ বীমাও। 

স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগার কথা, এখনও পর্যন্ত কি আদৌ শুরু হয়েছে এই সুরক্ষাকবচ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া? বলতে গেলে, সেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে আজ থেকে প্রায় দু’দশক আগে থেকেই। যুক্তরাজ্যের এসেক্সের মিসলিতেই রয়েছে এমন একটি বিলাসবহুল বাঙ্কার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ লগ্নে শুরু হয়েছিল এই বাঙ্কার তৈরির কাজ। ১৯৫১ সালে সম্পূর্ণভাবে নির্মাণ শেষ হয় সেটির। কয়েক বছর উচ্চপদস্থ সেনা আধিকারিকদের কাজে কমস হাব হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল এই বাঙ্কার। তারপর তা বদলে ফেলা হয় মিউজিয়ামে। ২০০২ সালে জাদুঘর বন্ধ করে বিলাসবহুল আশ্রয়কেন্দ্রের রূপ দেওয়া হয় এসেক্স বাঙ্কারকে। নেপথ্যে ছিলেন ব্রিটেনের কয়েকজন বিলিয়নেয়ার। বর্তমানে তিনটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে সেখানে। মিলিটারি গ্রেড ইস্পাত আর কংক্রিটের মোটা দেওয়ালে মোড়া এই বাঙ্কার শুধু ভূমিকম্পকেই নয়, পরমাণু বোমার আঘাত থেকেও মানুষকে বাঁচাতে পারে। 

একইরকম বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। তবে বিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল বিলিয়নেয়ার বাঙ্কার রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্রে। ৩ লক্ষ ২৩ হাজার বর্গফুটের বাঙ্কারটিতে রয়েছে আস্ত একটি গলফ কোর্স। তাছাড়াও হেলিপ্যাড, সুইমিং পুল, কৃত্রিম অক্সিজেনের ব্যবস্থা— সমস্ত কিছুই রয়েছে বাঙ্কারে। যুদ্ধের সময় বিপক্ষের হানা থেকে বাঁচার জন্য রয়েছে স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও। ২০১৩ সালে রিয়েল এস্টেট উদ্যোক্তা জ্যাকুব জামরাজিল বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত বাঙ্কারটি অধিগ্রহণ করে গড়ে তোলেন ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্র। দুটি সাড়ে ৬ হাজার বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট-সহ সাতটি দু’হাজার বর্গফুটের প্রিমিয়াম স্যুট রয়েছে ওপিডাম-খ্যাত এই বাঙ্কারে। ইতিমধ্যেই তার বেশ কয়েকটির মালিকানাও দখল করেছেন অর্থশালী বিলিয়নেয়াররা। 

আরও পড়ুন
মাটির তলায় আস্ত ‘দুর্গ’, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল লন্ডনের এই বাঙ্কার

রিপোর্ট অনুযায়ী, আর কয়েক দশকের মধ্যে বিশ্বের ১ শতাংশ ধনী মানুষই বসবাসের বিকল্প ব্যবস্থা করে ফেলবে মাটির তলায়। গবেষণার ভাষায় এই পরিবর্তনের নাম ‘র্যা ডিক্যাল সেলফ রিলায়েন্স’। আর ক্রমশই বাড়ছে তার হার। কিন্তু বৈশ্বিক ক্ষতিসাধনের ফলে সাধারণ মানুষদের পরিণতি ঠিক কী হবে, তা আজও অনিশ্চিত…

আরও পড়ুন
কৃষ্ণাঙ্গ-হত্যার প্রতিবাদ আছড়ে পড়ল হোয়াইট হাউসেও, বাঙ্কারে ‘পালিয়ে’ গেলেন ট্রাম্প

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More