ক্যাথিড্রাল কেভ লুকিয়ে আছে ভীমবেটকার মধ্যেই

পঞ্চম পর্ব

১৯৯০ সালে বেডনারিক নামে এক বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান ঐতিহাসিক আরো কয়েকজন ঐতিহাসিকের, যেমন কুমার, ত্যাগী প্রমুখের সঙ্গে ওয়াকাঙ্কারের আবিষ্কৃত ভীমবেটকার এক শৈলাশ্রয়ে বেশ কয়েকটি ‘Cupule’ বা শৈলকোরণ খুঁজে পান। শৈলাশ্রয়টির আকার এখানকার অন্যান্য শৈলাশ্রয় থেকে অনেক বড়। প্রায় ২৫ মি. দৈর্ঘ্যের এক সুড়ঙ্গাকার পথের প্রান্তে বিরাট এক ঘর। মনে হয় যেন কোনও বড় ও প্রধান মন্দিরের নাটমঞ্চ। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্যাথিড্রাল কেভ’। এই ঘরের তিন দিক খোলা। এটিই শৈলাশ্রয়। এই ঘরের একেবারে মাঝখানে বেশ বড় আকারের (২.৫ মি. উচ্চতা আর ৩.৪ মি. চওড়া) এক কোয়ার্টজাইট পাথর। এই পাথরটি Chief’s Rock বলা হয়। এই পাথরের গায়ে নয়টি Cupule পাওয়া গেছে। আরও পাওয়া গেছে পাথরটিতে লাল রং। পাথরটি কোয়র্টজাইট, তাই রং লালচে হওয়া অস্বাভাবিক নয়, তবে এই রং পিগমেন্টের, অর্থাৎ কোনও রঞ্জক পদার্থ দিয়ে এই রং করা হয়েছে। ওয়াকাঙ্কারের আবিষ্কৃত আর একটি শৈলাশ্রয়েও একটি Cupule আর সঙ্গে একই প্রকারে করা আঁকা-বাঁকা রেখা পাওয়া গেছে।

চতুর্থ পর্ব
ভীমবেটকার গুহায় ছিল জলের তলায়, ধারণা বিজ্ঞানীদের

Cupule-গুলোর খোদাই তা হলে কত বছর আগে হয়েছিল? প্রধাণত বেডনারিক-এর পরীক্ষালব্ধ ফল হল যে, এগুলো নাকি খ্রিষ্টপূর্ব অন্তত ২৯ লক্ষ বছর আগেকার মানুষের কীর্তি। ওঁর বক্তব্য, এগুলোর সৃষ্টি নাকি খ্রিষ্টপূর্ব ৭০ লক্ষ বছর আগে হওয়াও বিচিত্র নয়। তাহলে বেডনারিকের মতে প্রস্তর যুগ তাহলে অন্তত খ্রিষ্টপূর্ব ৭০ লক্ষ বছর আগে থেকেই আরম্ভ হয়েছিল, খ্রিষ্টপূর্ব ২৭ লক্ষ বছর আগে নয়। ভীমবেটকার Cupule-গুলো দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন থেকে প্রায় ৩০০ কিমি. দূরে ভারত মহাসাগরের তীরে ব্লোমবোস আর্ট কেভের থেকে চারগুণ বেশি বয়সের বলে জানা যায়। ব্লোমবোসের Cupule-গুলো প্রধানত জ্যামিতিক নকশার আকারে খোদিত। দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের ডোরডোগ্নেতে লা ফেরাসি গুহায় Cupule-গুলো অবশ্য অনেকটা ভীমবেটকার Cupule-র মতই। এগুলোর খোদাই কাল সম্ভবত মাত্র খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ হাজার বছর আগের।

 ভীমবেটকার শৈলচিত্র ও শৈলকোরণগুলোর যথাযথ পরীক্ষা করে বৈজ্ঞানিকরা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত হয়েছেন যে এই শিল্পগুলো অন্তত মধ্য প্যালিওলিথিক কাল থেকে একেবারে ঐতিহাসিক যুগ পর্যন্ত ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এসেছে। এর মধ্যে কোরণগুলো এই কালক্রমের প্রথম দিকে আর প্রাচীনতম চিত্রণগুলো মধ্য ও উচ্চ প্যালিওলিথিক কালের মাঝামাঝি সময়ের। কালক্রম বোঝবার জন্যে নিম্নলিখিত সারণিটি বেশ কাজের।

সময়কাল কালের নাম শিল্পের প্রকার প্রাচীনতম 
উদাহরণ (খ্রি.পূ.)
নিম্ন প্যালিওলিথিক Cupule এবং আঁকা-বাঁকা রেখা (Meandering line) অন্তত ২৯ লক্ষ বছর
মধ্য ও উচ্চ প্যালিওলিথিক বিরাটাকার পশুদের রেখা ছবি, যেমন, বাইসন, গণ্ডার, বাঘ ইত্যাদি। গাঢ় লাল আর সবুজের ব্যবহার। প্রায় ৩০ হাজার বছর।
মেসোলিথিক তুলনায় ছোট ছবি। তবে কিছু রৈখিক অলঙ্করণ আছে। পশুদের ছবি ছাড়াও পাখি ও মানুষের উপস্থিতি ও শিকারের দৃশ্য আছে। তির-ধনুক, বর্শা ইত্যাদির ব্যবহার দেখানো হয়েছে। নৃত্য, মা ও শিশু, কবরের ইত্যাদি সামাজিক ক্রিয়া-কলাপের ছবি আছে। প্রায় ২০ হাজার বছর।
চাল্কোলিথিক শৈলাশ্রয়ের মানুষদের সঙ্গে নিকটবর্তী কৃষিজীবী মানুষদের সম্পর্ক স্থাপন হয়েছিল তার প্রমাণ এই সময়ের ছবিতে প্রকাশ পেয়েছে। ১০ হাজার বছরের মধ্যে।
প্রাচীন ঐতিহাসিক যুগ প্রধানত লাল, হলদে ও সাদা ছবি এবং সেগুলি পরিকল্পিত ও আলঙ্কারিক। ধার্মিক চিহ্ন, যক্ষ, বৃক্ষ-রূপী ভগবান, আকাশযান ইত্যাদির ছবি দেখা যায়। প্রায় ২/৩ হাজার বছর।
মধ্যযুগ অধিক পরিকল্পিত আর জ্যামিতিক তবে সুন্দর নয়। কাঠকয়লা, ম্যাঙ্গানিজ ও নরম লাল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে রং করার জন্যে। ভারতের ইতিহাসে অষ্টম থেকে ষোড়শ শতক

(শেষ)

More From Author See More