কলকাতার অটিস্টিক কিশোর-কিশোরীদের হাতেই প্রাণ পাচ্ছে ভেজিটেবল প্রিন্টিং

“অটিজম কোনো অসুখ নয়। এটা একটা বিশেষ মানসিক অবস্থা। ওরা আমাদের থেকে একটু অন্যরকম। কিন্তু তাদের না পারাটুকুই সমাজ দেখিয়ে দেয় চোখে আঙুল দিয়ে। কিন্তু তারাও নিজেদের মতো করে অনেক কিছু পারে, আমাদের থেকে অনেক কাজে অনেক বেশি দক্ষ।” বলছিলেন ট্রান্সেন্ডেন্ট নলেজ সোসাইটির কর্ণধার অমৃতা রায়চৌধুরী। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার এই সংস্থার উদ্যোগেই শুরু হয়েছে এক বিরাট কর্মকাণ্ড। ১০-১৫ বছরের অটিস্টিক কিশোর-কিশোরীদের নিয়েই ভেজিটেবল প্রিন্টিং-এর কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। ‘চরকা’ নামের এই উদ্যোগে তোয়ালে থেকে হাতব্যাগ সবই তৈরি করছে কিশোর-কিশোরীরা।

ভেজিটেবল প্রিন্টিং বিষয়টি নতুন লাগতে পারে অনেকেরই। “ছোটোদের স্কুলে কর্মশিক্ষার কাজে ছাড়া কোথাও এই পদ্ধতির ব্যবহার হয় না সেভাবে।” বলছিলেন অমৃতা রায়চৌধুরী। তবে কেন এমন অভিনব আয়োজন? অমৃতা জানালেন, “ভেজিটেবল প্রিন্টিং কেন, এর উত্তর দিতে গেলে অবশ্যই বলতে হবে আমাদের আর্থিক সঙ্গতির অভাব। ব্লক প্রিন্টিং-এর ইউনিট তৈরির বাজেট আমাদের নেই।” তবে কিছুদিনের মধ্যেই ব্লক প্রিন্টিং-এর দিকে চলে যেতে চান তিনি। এই সময়ের কাজটা তখন ট্রেনিং হিসাবে কাজে লেগে যাবে।

আরও পড়ুন
অটিজম-আক্রান্ত ব্যক্তিদের বন্ধুত্বে জুড়বে অ্যাপ, অভিনব উদ্যোগ আমেরিকার তরুণীর

অমৃতা বলছিলেন, “ওদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েই বুঝেছি, ওরা কাজের মধ্যে একধরণের প্যাটার্ন ভালোবাসে। ব্লক প্রিন্টিং-এর মাধ্যমে সেই প্যাটার্নকেই ধরার চেষ্টা করছি।” অবশ্য অটিস্টিক কিশোর কিশোরীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছে ট্রান্সেন্ডেন্ট নলেজ সোসাইটি। লেক রোডে চারুচন্দ্র কলেজের কাছে একটি আস্ত ক্যাফে চালাতেন তাঁরাই। তবে লকডাউনের সময় তাঁদের ভাগ্যে নেমে এল অন্ধকার। ক্যাফে বন্ধ হল। কিন্তু অসহায় কিশোর কিশোরীদের হাত ছেড়ে দিতে চাইলেন না অমৃতা। সেখান থেকেই বছরখানেক আগে শুরু হল ভেজিটেবল প্রিন্টিং-এর কর্মশালা।

আরও পড়ুন
অটিজম-আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গী বিকলাঙ্গ প্রাণীরা, বন্ধুত্বের মধ্যে দিয়েই শুশ্রূষা টেক্সাসে

ইতিমধ্যে দুটি ই-কমার্স সংস্থা এগিয়ে এসেছে ‘চরকা’-র তৈরি এইসমস্ত সামগ্রী বিপণনের জন্য। “সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকেও ব্যাপক উৎসাহ পাচ্ছি। সবথেকে ভালো লাগছে এদের বাবা-মায়ের কথা ভেবে। তাঁরা একসময় ভেবেছিলেন সন্তানরা হয়তো আর কোনোদিন বাকিদের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু এই বিশ্বাস যে একেবারেই ঠিক ছিল না, সেটা তাঁরা বুঝতে পারছেন।” বলছিলেন অমৃতা। কিছুদিন আগেই পেরিয়ে গেল আরও একটি ‘অটিজম সচেতনতা দিবস’। সচেতনতা এখন একটু একটু করে বাড়ছেও। এমনটাই বলছিলেন অমৃতা। “১০ বছর আগে তো অটিজম শব্দটাই মানুষের অজানা ছিল। আজ অন্তত তাদের নিয়ে আলোচনা হয়।” কিন্তু প্রকৃত অর্থে সমান সুযোগ পাওয়ার লড়াইটা এখনও অনেকটাই বাকি। এই উদ্যোগ সেই লড়াইয়ের পথে একটা ছোট্ট শুরু। 

Powered by Froala Editor

More From Author See More