অটিজম-আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গী বিকলাঙ্গ প্রাণীরা, বন্ধুত্বের মধ্যে দিয়েই শুশ্রূষা টেক্সাসে

শহরের ব্যস্ত রাস্তা। ফুটপাতেও মানুষের ঢল। তারই এক কোনে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে একটা কুকুর। রাস্তার কুকুর। হয়তো দুর্ঘটনায় একটি পা জখম হয়েছে। অথবা কোনো প্যারাসাইটের আক্রমণে মাথায় তৈরি হয়েছে দগদগে ঘা। এইসব প্রাণীদের উপযুক্ত সুরক্ষা দিয়ে নিরাপদ বাসস্থান দেওয়ার কথা আর কজনই বা ভাবেন? সম্প্রতি সেরকমই একটি উদ্যোগ নিয়েছেন আমেরিকার টেক্সাস অভয়ারণ্যের কর্তারা। দুঃস্থ, বিকলাঙ্গ প্রাণীদের নিরাপদ বাসস্থান দিতেই শুরু করেছেন ‘সেফ ইন অস্টিন’ প্রকল্প।

কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীদের ঠিক বন্যপ্রাণী বলা চলে না। মানুষের সঙ্গে থাকতে থাকতে তারা খানিকটা অভ্যস্তই হয়ে পড়েছে। কিন্তু আধুনিক মানুষের নিরন্তর অবহেলা ভোগ করতে হচ্ছে তাদেরও। এমনকি এর ফলে শৈশব থেকেই অনেক প্রাণীর মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে বলেও জানিয়েছেন প্রকল্পের মূল কাণ্ডারি জেমি ওয়ালেস-গ্রিনার। আর তাই তাদের প্রয়োজন একটু মানবিক আচরণ। তবে সমস্ত মানুষই কি প্রাণীদের এভাবে অবহেলা করেন? অবশ্যই না। আর এর মধ্যেই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তুলে এনেছেন জেমি। এই পৃথিবীতে অটিস্টিক ডিসঅর্ডার নিয়ে জন্ম হয় যেসব শিশুর, তাদের মধ্যে পশুদের নিয়ে একটা ভালোবাসার অনুভূতি সহজেই গড়ে ওঠে। সমাজের প্রচলিত চলনের সঙ্গে তারা খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। আর হয়তো সেজন্যই অবহেলিত প্রাণীদের সঙ্গে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

‘সেফ ইন অস্টিন’ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য তথাকথিত অটিস্টিক শিশুদের সঙ্গে পশুদের একটা মেলামেশার জায়গা খুলে দেওয়া। অভয়ারণ্যের মধ্যেই তৈরি হয়েছে তার পরিসর। আর প্রকৃতির স্পর্শে সমস্ত অবসাদ কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন মানব শিশুরাও। রাস্তার প্রাণীদের উদ্ধার করে এনে প্রথমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তারপর যদি তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে, তাহলে রেখে আসা হয় কোনো নিরাপদ জায়গায়। নাহলে অভয়ারণ্যের একটা অংশেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। পঙ্গু প্রাণীদের জন্য চাকা দেওয়া গাড়ি সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থাও করে কর্তৃপক্ষই।

ইতিমধ্যে সেখানে আশ্রয় পেয়েছে ২০টি কুকুর, ১৪টি বেড়াল, ৮টি ঘোড়া, ৩২টি ছাগল, ৪টি খরগোস, ৩টি কচ্ছপ এবং এরকম আরও নানা প্রাণী। এদের কেউই মানুষ আদর করে ঘরে পুষে রাখেনি। কিন্তু এই স্বাভাবিক প্রাণীজগৎকেই আজ বাঁচিয়ে রাখা ভীষণ জরুরি। পরিবেশের স্বার্থে এবং অবশ্যই মানুষের স্বার্থে। ভবিষ্যতে টেক্সাসের পথ ধরে এমন প্রকল্প আরও নানা দেশে শুরু হবে, এমনটা আশা করাই যায়।

Powered by Froala Editor