অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের খনি থেকে বিষাক্ত গ্যাসের নিঃসরণ, মৃত বিরল গাঙ্গেয় ডলফিন

দিন দুয়েক আগেই কেরালায় উদ্ধার হয়েছে একটি অন্তঃসত্ত্বা হাতির মৃতদেহ। তার খাবারের ভিতর বাজি-পটকা ভরে দিয়েছিল নিষ্ঠুর মানুষ। আর তার ঠিক দুদিনের মাথায় পাওয়া গেল আরও একটি বিপন্ন প্রাণীর মৃতদেহ। শুক্রবার আসামের মাগুরি জলাভূমি থেকে উদ্ধার হল একটি গাঙ্গেয় রিভার ডলফিনের মৃতদেহ। তবে এই মৃত্যুর জন্য কোনো ব্যক্তি মানুষ দায়ী নয়। বরং দায়ী একটি গোটা ব্যবস্থা। এবং সরাসরি দায়ী করতে হলে বলতে হয় সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডই দায়ী এই মৃত্যুর জন্য।

আসামের তিনশুকিয়া জেলার একটি তৈলখনিতে হঠাৎ শুরু হয়েছিল ব্লো-আউট অর্থাৎ খনিজ গ্যাসের অনিয়ন্ত্রিত নিঃসরণ। ঘটনাটি ঘটে ২৫ মে, সোমবার। যদিও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল, কিন্তু সারা সপ্তাহ জুরেও কোনো ব্যবস্থাই করে ওঠা সম্ভব হয়নি। এদিকে নিঃসৃত গ্যাসের বিষক্রিয়ায় আশেপাশের জনবসতি তো বটেই, বিপর্যস্ত প্রাণীকুল। ২৯ মে তারিখে নিকটবর্তী জলাভূমি থেকে উদ্ধার হয় একটি বিরল গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃতদেহ। শুধু এই একটি প্রাণী নয়, আশপাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও অনেক মাছের মৃতদেহ। জঙ্গলের পাখিরাও ক্রমশ ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছে। ঘটনার ভয়াবহতায় স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন বনবিভাগের কর্মীরা।

তিনশুকিয়া বিভাগের ডেপুটি ফরেস্ট অফিসার রাজেন্দ্র ভারতী জানিয়েছেন, গ্যাসের প্রভাব যে আশেপাশের পরিবেশে যথেষ্ট মাত্রায় পড়েছে সেবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তার পরিমাণ বোঝার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা চালাচ্ছে। তার পরেই বোঝা যাবে এই প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী। অন্যদিকে স্থানীয় পরিবেশকর্মী নিরন্ত গোহেইন জানিয়েছেন, অকুস্থল থেকে ৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে অবস্থিত তাঁর ফার্মেও বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাব এসে পড়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

অবশ্য ঘটনার বিষয়ে ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড। তাঁরা দায়ভার এড়িয়ে যেতে চাইছেন না। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসন এবং বনবিভাগের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়া গেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে এই ঘটনার জন্য জবাবদিহি চেয়ে পাঠানো হয়েছে মেসার্স জন এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেডের কাছে। এই বেসরকারি কোম্পানিটি আসামের তৈলখনির দায়িত্বে ছিল। তাদের গাফিলতির জন্যই এই ক্ষতি ঘটেছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের কর্তারা। কিন্তু দোষ যারই হোক, যে অসংখ্য প্রাণ মৃত্যুর মুখে পতিত হল তারা তো আর ফিরে আসবে না। মানুষের আধুনিকতার চাকা এভাবেই অসংখ্য জীবনের উপর দিয়ে এগিয়ে চলেছে বহুদিন ধরে। আর তার ফলে আজ অনেক প্রাণীই বিপন্ন। তবুও কি সচেতন হচ্ছি আমরা? স্মরণযোগ্য অতীতেও এমন ঘটনার সংখ্যা তো খুব কম নয়!

আরও পড়ুন
মুখের ভেতরে বিস্ফোরণ, গত এপ্রিলেও কেরালায় একইভাবে মারা গিয়েছিল একটি হাতি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আসামে বন্যায় আশ্রয়হীন ৩ লক্ষ মানুষ, মৃত এক; ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসে বাড়ছে দুশ্চিন্তা