আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ আসামে, ২৫০০ শূকরের মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য

দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বেশ কিছু দেশে কুকুর, বাঘ এবং পোষ্য বিড়ালের দেহেও পাওয়া গেছে ভাইরাসের অস্তিত্ব। কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি ভারতে। তবে অন্য প্রাণীদের নিস্তার নেই তাতে। কিছুদিন আগে অ্যানথ্রাক্সের শিকার হয়েছিল বন্যপ্রাণীরা। এবার হানা দিল আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লু। আসামে প্রায় আড়াই হাজার শূকরের প্রাণ গেল এই রোগের সংক্রমণে। রবিবার আসামের সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় এই তথ্য।

তবে সংক্রমণ থামাতে এই মুহূর্তেই শূকর হত্যার পথ বেছে নিতে নারাজ সরকার। পশুপালন মন্ত্রী অতুল বোরা জানান, বিকল্পের সন্ধান করছে সরকার। আক্রান্ত না হওয়া প্রাণীগুলিকে পৃথক করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

‘দ্য ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হাই সিকিওরিটি অ্যানিমাল ডিসিসেস’ জানিয়েছে, অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই রোগটি। মৃত্যুর হার প্রায় ১০০ শতাংশ। ২০১৯-এর গণনা অনুযায়ী আসামে শূকরের সংখ্যা ২১ লাখ। বর্তমানে সেটি বেড়ে প্রায় ৩০ লাখে গিয়ে পৌঁছেছে। ফলে সোয়াইন ফ্লুয়ের সংক্রমণের প্রভাব ভয়ঙ্কর রকম হতে পারে আসামে। সতর্ক করেছে ওই সংস্থা।

পশুপালন মন্ত্রকের আধিকারিকেরা ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন পরীক্ষার কাজ। সংক্রমিত অঞ্চলগুলির এক কিলোমিটার মধ্যে প্রাণীদের নমুনা নিয়ে টেস্ট করা হচ্ছে। আসামে এই মুহূর্তে মাত্র তিনটি পরীক্ষাগার রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আরো বেশি পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রয়োজন পড়লে দারস্থ হতে হবে স্বাস্থ্যদপ্তরের। জানিয়েছেন আধিকারিকেরা। ভারতে প্রথম এই ফ্লুয়ের সংক্রমণ হওয়ায় অনভিজ্ঞতার সম্মুখীন তাঁরা।

এখনও পর্যন্ত ৩০৬টি গ্রামে ধরা পড়েছে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব। সংক্রমণ রুখতে, শূকরের সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে আসামে। মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয় না। তাই সংক্রমণহীন অঞ্চলগুলিতে এই মুহূর্তে শূকরের মাংস খাওয়া বিপজ্জনক নয়।

তবে এই ভাইরাসের বাহক হতে পারে মানুষও। এমনই একটি ঘটনা সম্প্রতি নজরে এসেছে আসামের আধিকারিকদের। মূলত বন্য শূকররাই আক্রান্ত হয় এই রোগে। কিন্তু আসামের একটি ফার্মে সংক্রমণের ফলে মারা যায় ২৩০ টি শূকর। যেহেতু সংক্রমিত কোনো প্রাণীর সংস্পর্শে আসেনি তারা, সন্দেহ করা হচ্ছে মানুষের মাধ্যমেই ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। কৃষকদের সচেতন করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে চিন থেকেই ছড়িয়েছে এই রোগ। গত ফ্রেবরুয়ারি মাসে প্রথম নজরে আসে এটি। গত বছরের এপ্রিলে অরুণাচল লাগোয়া চিনের জিজাং গ্রামে সূত্রপাত হয়েছিল এই ভাইরাসের। অরুণাচল হয়েই প্রতিবেশী রাজ্য আসামে হানা দিয়েছে এই ভাইরাস। সেখান থেকেই ছড়িয়েছে সংক্রমণ। এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।