নাগরিকত্ব বিল নিয়ে উত্তাল আসাম ও ত্রিপুরা, বন্ধ ইন্টারনেটও

নেট বন্ধ। ফোন যাচ্ছে না। দোকান-পাশা সমস্ত বন্ধ, রাস্তায় পড়ে আছে সামগ্রী। বাস জ্বলছে। এক নজর পড়ে মনে হতেই পারে আবারও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে কাশ্মীরে। কিন্তু, আপনি এই ক্ষেত্রে ভুল হলেন। কাশ্মীর নয়, গতকাল থেকে এমনই পরিস্থিতি ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির। বিশেষ করে, আসাম ও ত্রিপুরা। কেন্দ্রীয় সরকার দুদিনের জন্য ত্রিপুরায় ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আর এত সব ঘটনার কারণ? নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এবং অবশ্যই, এনআরসি।

সম্প্রতি মধ্যরাতে লোকসভায় পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। তার আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও পাশ করা হয়েছিল এটিকে। এবার রাজ্যসভার পালা। সমস্ত জায়গাতেই বিরোধী মতকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের কাজ হাসিল করে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। সংবিধানের সাম্যের অধিকারকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হচ্ছে না, এমনই কথা বলে যাচ্ছেন বিরোধী দল থেকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এদিকে লোকসভায় এই বিল পাশ হওয়ার পরই বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। বিশেষ করে, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি, যারা প্রথম থেকেই এই বিলের বিরোধিতা করে এসেছে।

আসাম ও ত্রিপুরা রীতিমত ফুঁসে ওঠে এই বিল পাশের পর। আসামে ছাত্ররা বিক্ষোভে নামে, দোকান বাজার বন্ধ হয়ে যায়। সরকারের নেতাদের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। গুয়াহাটিতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের খণ্ডযুদ্ধ বাধে। ত্রিপুরাতেও পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আর এইরকম অবস্থাতেই, ত্রিপুরায় দুইদিনের জন্য সমস্ত ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তাহলে কী দেখা যাচ্ছে? যে সমস্ত রাজ্যে এই বিলের সরাসরি প্রভাব পড়বে, সেখানেই শুরু হচ্ছে আন্দোলন। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলি প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিল। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলছেন যে তিনি সব পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা করে, তাঁদের সম্মতিতেই এই বিল তৈরি করেছেন। তাহলে এত বিক্ষোভ কেন? কোনও কথাই কি তাহলে শোনা হয়নি? প্রসঙ্গত, গোটা দেশে এনআরসি লাগু করার যে এজেন্ডা ছিল শাসক দলের, তারই পূর্ববর্তী পদক্ষেপ হিসেবে এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। তাহলে কি যেনতেন প্রকারেণ বিরোধী স্বরকে দাবিয়ে রাখাটাই উদ্দেশ্য? সদ্যই লোকসভায় পাশ হয়েছে এই বিল। এখনও রাজ্যসভায় পাশ হওয়া বাকি। তারমধ্যেই এমন উত্তাল পরিস্থিতি। ভবিষ্যতে কী হবে তাহলে? এর থেকেও তো ভয়াবহ হতে পারে অবস্থা। ইতিমধ্যেই আসামে প্রায় ১,০০০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। একটি রাজ্যের ইন্টারনেট যোগাযোগ পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ। এইভাবেই কি দমিয়ে রাখা হবে আমাদের? আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ— এই তিন রাজ্যেই এনআরসির জন্য সাধারণ মানুষ আত্মহত্যা করছে। আগামী দিনগুলো কি তাহলে এমনই দৃশ্য দেখে যেতে হবে আমাদের?

ছবি ঋণ - DNA India