পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মৌমাছির বৈচিত্র্য আরিজোনার মরুপ্রান্তরে!

চারিদিকে ধূ ধূ বালুপ্রান্তর। তার মধ্যেই ছোট্ট একটি মরুদ্যান। এর মধ্যেই যে লুকিয়ে ছিল পৃথিবীর অন্যতম বিস্ময়, তা আন্দাজ করতে পারেননি বৈজ্ঞানিকরা। সম্প্রতি আমেরিকার আরিজোনা এবং সোনোরা স্টেটের মধ্যবর্তী সান বার্নারডিনো উপত্যকায় (San Bernardino Valley) বাস অসংখ্য মৌমাছির প্রজাতির। আর সারা পৃথিবীর যে সমস্ত জায়গায় এখনও পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করেছেন, তার মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি প্রজাতির বৈচিত্র্য (Highest Diversity) দেখা গিয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা। সম্প্রতি জার্নাল অফ হাইমেনোপেট্রা পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এমনটাই দেখা গিয়েছে। আর শুধু যে সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্য, তাই নয়। এত ছোটো এলাকায় এত বেশি প্রজাতির ভিড় রয়েছে যে, পৃথিবীর কোনো অঞ্চলই তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারবে না।

২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সান বার্নারডিনো উপত্যকার প্রায় ৮৫টি স্পটে ঘুরেছেন মৌমাছি বিশেষজ্ঞ বব মিঙ্কলে। সেখান থেকে প্রায় ৮০ হাজার নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। আর এই নমুনাগুলির প্রজাতি শনাক্তকরণের জন্য এগিয়ে আসেন বার্নারডিনো ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ রিফিউজের ম্যানেজার বিল রাডকে। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে সংগৃহীত নমুনাগুলির মধ্যে রয়েছে ৪৯৭টি প্রজাতি। অর্থাৎ আমেরিকায় যত ধরনের মৌমাছি দেখা যায়, তার প্রায় ১৪ শতাংশ। এই সমস্ত প্রজাতি পাওয়া গিয়েছে মাত্র ২০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে।

বার্নারডিনো মরুদ্যানে যে নানা প্রজাতির মৌমাছির বাস রয়েছে, এমনটা জানতেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তার প্রকৃত পরিসংখ্যান প্রত্যেককেই অবাক করেছে। আর তার কারণ এত বেশি মৌচাক দেখা যায় না সেখানে। মিঙ্কলে যে প্রজাতিগুলির সন্ধান পেয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই বাসা বাঁধতে জানে না। সমাজবদ্ধ মৌমাছির প্রজাতি রয়েছে ১০ শতাংশ মতো। বাকিরা মাটির নিচে গর্ত করে বাস করে। কেবলমাত্র বসন্তে অথবা বর্ষায় প্রজননের জন্য মাটির বাইরে বেরিয়ে আসে। এই সময়েই সারা বছরের জন্য মধু সংগ্রহ করে রাখে তারা। স্ত্রী মৌমাছিরা সঙ্গে রেখে দেয় লার্ভাকে খাওয়ানোর জন্য বিশেষ নেক্টার।

তবে ঠিক কী কারণে এখানে এত বেশি মৌমাছির প্রজাতির ভিড়, তার কোনো কারণ দিতে পারেননি গবেষকরা। মরুভূমি অঞ্চলে অবস্থিত হলেও এখানে জীববৈচিত্র্য নেহাৎ কম নয়। অন্তত ৫০০ প্রজাতির উদ্ভিদের সঙ্গে রয়েছে নানা ধরনের সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ীর বাস। তবে তাদের কারোর সংখ্যাই মৌমাছির সংখ্যার ধারেকাছে যায় না। এই রহস্য সমাধানের জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন বলেই মনে করছেন মিঙ্কলে।

আরও পড়ুন
বিশ্বজুড়ে ৫০ হাজার মৌমাছির ছবি আঁকতে উদ্যোগী মার্কিন শিল্পী

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিশুদ্ধ মধু-র খোঁজে ঘুরেছেন গোটা দেশ, বন্ধু মৌমাছিরও – বাঙালি গবেষকের ‘মধুর’ গল্প