মারণ এইডস থেকে মুক্তি, আশা জাগাচ্ছেন আর্জেন্টাইন মহিলা

প্রতিষেধকের সাহায্যে ঠেকানো গিয়েছে করোনা ভাইরাসের উপদ্রব। তবে আরও একটি রেট্রোভাইরাসের হাত থেকে মুক্তির এখনও কোনো পথ খুঁজে বের করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। হ্যাঁ, এইচআইভি। যার থেকে জন্ম নেয় এইডস নামক মারণ রোগ। প্রতিষেধক তো দূরের কথা, এই ইনফেকশন সারিয়ে তোলারও কোনো উপায় জানেন না বিজ্ঞানীরা। তবে এর মধ্যেই আশার আলো দেখালেন আর্জেন্টিনার (Argentina) এক ৩০ বছরের মহিলা। না, তিনি বিজ্ঞানী নন। বরং এইচআইভি (HIV) সংক্রমিত এক রোগী ছিলেন তিনি। তবে হঠাৎই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। এমনকি বহু পরীক্ষা করেও তাঁর শরীরে সংক্রমণের ন্যূনতম নমুনাও খুঁজে পাননি চিকিৎসকরা। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছেন সকলেই।

২০১৩ সালে এই মহিলার শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ ধরা পড়ে। অবশ্য ভাইরাসের প্রবেশ তারও বেশ কয়েক বছর আগেই ঘটে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অনেকের শরীরেই এইচআইভি সংক্রমণের বেশ কয়েক বছর পর তার উপসর্গ দেখা যায়। এঁর শরীরেও তেমনটাই হয়েছিল। তবে এরপর একের পর এক অঙ্গে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত বিশেষ ওষুধের সাহায্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে প্রত্যেক এইডস আক্রান্তকেই কিছুদিন ওষুধ বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই আবারও ওষুধ চালু করতে হয়। অথচ এই মহিলার ক্ষেত্রে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওষুধের কোনো প্রয়োজন হয়নি। বিষয়টিতে আশ্চর্য হয়ে চিকিৎসকরা জিন স্তর পর্যন্ত পরীক্ষা চালিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই এইচআইভি ভাইরাসের আর কোনো স্ট্রেইন পাওয়া যায়নি।

অবাক করা এই ঘটনাটি নিয়ে ‘অ্যানালস অফ ইন্টারনাল মেডিসিন’ পত্রিকায় একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। তবে ঠিক কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তার কোনো সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। অনেকেই একে ‘বার্লিন ম্যান’ নামে খ্যাত জার্মান ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে তাঁর এইডসের সঙ্গে শরীরে লিউকোমিয়া দেখা দিয়েছিল। আর তাই রক্ত এমনকি অস্থিমজ্জা পর্যন্ত প্রতিস্থাপন করতে হয়। ফলে তাঁর শরীরে নতুন করে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠা খুব আশ্চর্যের বিষয় ছিল না। কিন্তু এই মহিলার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে না।

পৃথিবীর অন্যতম ভয়াবহ রোগগুলির মধ্যে এইডস একটি। বিগত ৫ দশক ধরে অন্তত ৮ কোটি মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়েছে এইচআইভি ভাইরাস। এর মধ্যে ৩ কোটি ৬৬ লক্ষের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাকিরাও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছেন। তবে এই মহামারী পরিস্থিতিতেও বিজ্ঞানীরা আশার আলো দেখছেন। আরও গভীরে গবেষণার মাধ্যমে এই ঘটনার কোনো কারণ জানা যাবে বলেই বিশ্বাস তাঁদের। আর তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যেই পৃথিবীকে এইডসমুক্ত করা সম্ভব। এমনটাই বলছেন জাতিপুঞ্জের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন
আবিষ্কারের পথে এইচআইভি-র ওষুধ? আশা দেখাচ্ছে মার্কিন সংস্থা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৪০ বছর ধরে লাগাতার ব্যর্থতা, আজও অধরা এইডসের প্রতিষেধক