৪০ বছর ধরে লাগাতার ব্যর্থতা, আজও অধরা এইডসের প্রতিষেধক

১৯৮১ সালে আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল সন্ধান পায় একটি নতুন ভাইরাসঘটিত রোগের। এমন এক ভাইরাস যা মানুষের শরীরের সামগ্রিক অনাক্রম্যতাকেই কমিয়ে দেয়। ফলে নানা ধরণের রোগের আক্রমণ ঘটে খুব সহজে। হ্যাঁ, যে রোগের কথা বলা হচ্ছে তার নাম এইডস। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল ঠিক ৪০টা বছর। ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীতে ৩৮ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে। তবু আজও তার কোনো প্রতিষেধক পাওয়া যায়নি। করোনা অতিমারীর মধ্যেই নতুন করে উঠে আসছে এইডস ভ্যাকসিনের প্রসঙ্গও। অভূতপূর্ব দ্রুততায় বিজ্ঞানীরা কোভিড ভ্যাকসিন প্রস্তুতিতে সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু কোথায় এইডসের ভ্যাকসিন?

ইতিমধ্যে নতুন করে শুরু হয়ে গিয়েছে এইডস ভ্যাকসিন প্রস্তুতির চেষ্টা। তবে প্রতিষেধক আবিষ্কৃত না হলেও এইডসের কোনো চিকিৎসা নেই, এমনটা কিন্তু নয়। ইতিমধ্যে দুটি বিশেষ ধরণের চিকিৎসার উপর জোর দিয়েছেন চিকিৎসকরা। একটি হল অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি বা এআরটি। এই চিকিৎসার ফলে আক্রান্ত মানুষের শরীরে বাসা বাঁধা ভাইরাসগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা যায়। ফলে তারা আর কোনো নতুন অঙ্গকেও আক্রমণ করতে পারে না। এবং অন্য মানুষের শরীরেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে না। রোগী যতদিন এই চিকিৎসার মধ্যে থাকবেন ততদিন আশঙ্কার কোনো কারণ নেই বলেই মনে করেন চিকিৎসকরা।

পাশাপাশি পিআরইপি বা প্রি-এক্সপোজার প্রোফিল্যাক্সিস নামে আরেক ধরণের চিকিৎসার পথে হাঁটছেন ডাক্তাররা। এটি আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার জন্য নয়। বরং যাঁদের সঙ্গী বা এমন কেউ আক্রান্ত হয়েছেন যে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল, তাঁদেরই প্রতিদিন একটি করে ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। তবে এটি প্রতিষেধক নয়। কিছু সময়ের জন্য সংক্রমণের সম্ভাবনা আটকাতে পারে শুধু। তাই প্রতিদিন এই ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। প্রকৃতপক্ষে এইচআইভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে সাফল্য পেতে গেলে প্রতিষেধক ছাড়া গতি নেই। ইতিমধ্যে তাই আবারও শুরু হয়ে গিয়েছে সেই চেষ্টা।

কোভিড ভ্যাকসিন তৈরির সময়েই বিজ্ঞানীরা এমন কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন, যা এইডসের ভ্যাকসিন প্রস্তুতির জন্যও প্রয়োগ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে সেইসমস্ত পদ্ধতির খুঁটিনাটি সম্বন্ধে আরও অনেক তথ্য জানা গিয়েছে। তাই ২ বছর আগেও যা একরকম অসম্ভব ছিল, আজ তাকে অসম্ভব বলতে রাজি নন অনেকেই। ইতিমধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির তৈরি একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছে। আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে। আর চলতি বছরের শেষেই জানা যাবে তার ফলাফলও। আরও বেশ কিছু পরীক্ষাগারে চেষ্টা চলছেই। এভাবেই হয়তো আরও একটি মারন ভাইরাসের কবল থেকে মুক্তি পাবে মানুষ।

আরও পড়ুন
পূর্বভারতে একের পর এক ভ্যাকসিনের ট্রায়াল, নেপথ্যে বাঙালি গবেষকরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দেশজুড়ে ভ্যাকসিন-সংকট, সরকারকেই কাঠগড়ায় তুললেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা