গুয়াতেমালায় মায়া ক্যালেন্ডারের প্রাচীনতম নিদর্শনের হদিশ পেলেন গবেষকরা

পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে অন্যতম রহস্যময় সভ্যতা মায়া। এমনকি মানব সভ্যতার কী পরিণতি হবে— সে-ব্যাপারেও ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিল মায়ারা। পূর্বাভাস লিপিবদ্ধ করেছিল ক্যালেন্ডারে। এই গল্প সকলেরই অল্প-বিস্তর জানা। এতদিন পর্যন্ত ধরে নেওয়া হত প্রথম শতক থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীন মায়ান ক্যালেন্ডার। তবে সাম্প্রতিক আবিষ্কার আরও খানিকটা পিছিয়ে দিল তাঁর সময়কাল। গুয়াতেমালায় প্রাচীন মায়ান পিরামিডের মধ্যে থেকে হদিশ মিলল প্রাচীনতম ক্যালেন্ডারের (Mayan Calendar) নিদর্শন।

উত্তর গুয়াতেমালার (Guatemala) অরণ্যের মধ্যে সান বার্তেলো প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটে সম্প্রতি গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন পাথরের তৈরি মায়ান ক্যালেন্ডারের বেশ কিছু খণ্ড। যার কোনোটির আকার মাত্র কয়েক মিলিমিটার, আবার কোনোটি ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা। তবে সেগুলি যে মায়ার ঐতিহাসিক ক্যালেন্ডারের অংশ তা প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারেননি গবেষকরা। 

মায়া সভ্যতা আবিষ্কারের পর থেকেই প্রত্নতাত্ত্বিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে সান বার্তেলো সাইটে লাস পিন্টুরাস পিরামিডের ধ্বংসাবশেষ। এই ধ্বংসাবশেষেই খননকার্য চালানোর সময় প্রাচীন ক্যালেন্ডারের ম্যুরালগুলি আবিষ্কার করেন গবেষকরা। মায়াদের মতো এই পিরামিডও বেশ রহস্যময়ই বটে। আদতে এই পিরামিডের কেন্দ্রে রয়েছে একটি প্রাচীন মায়ান মন্দির। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মন্দিরের গায়েই একাধিক নির্মাণের আস্তরণ চাপিয়েছিল মায়া সভ্যতার মানুষরা। ক্রমে সেই আস্তরণের পরত বাড়তে বাড়তে পিরামিডের রূপ নেয় সেটি। তার পেটের ভেতর চাপা পড়ে যায় মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। 

পিরামিডের খননে পাওয়া সচিত্রিত প্রস্তরখণ্ডগুলিকে দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাথমিকভাবে মনে করেছিলেন সেগুলি মন্দিরেরই প্রাচীরসজ্জা। তবে সেগুলির বিশ্লেষণে রীতিমতো চমকে ওঠেন গবেষকরা। ১১টি প্রস্তরখণ্ড জুড়ে তৈরি হয় ‘৭ ডিয়ার’-খ্যাত একটি বিশেষ শিলালিপি। আদতে যা মায়ান ক্যালেন্ডারের একটি দিন বিশেষ। 

আরও পড়ুন
সিনেমা দেখে অনুপ্রেরণা, ২৬ শিশুকে জ্যান্ত কবর, মার্কিন ইতিহাসের করুণ অধ্যায়

৩৬৫ দিনের সৌরবছরের ব্যবহার জানলেও, মায়া সভ্যতার রীতি অনুযায়ী বছর হত ২৬০ দিনের। আর বছরের প্রতিটি দিনকেই আলাদা আলাদা নামে চিহ্নিত করত মায়ারা। ‘৭ ডিয়ার’ তেমনই একটি দিন। গবেষকদের মতে, পিরামিড তৈরির সময় মায়ারাই ধ্বংস করেছিল অভ্যন্তরীণ মন্দিরটি। ক্যালেন্ডারটিও ধ্বংস হয় সেইসময়ই। অনুমান, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে ধ্বংস হয়েছিল মন্দিরটি। তারও বহু আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ক্যালেন্ডার। ফলে, মায়া ক্যালেন্ডারের বয়স অন্ততপক্ষে বাড়ল আরও দু’শতাধিক বছর। যা প্রত্নবিদ্যার জগতে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার তো বটেই। সম্প্রতি ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষকপত্র…

আরও পড়ুন
ইতিহাস বা রূপকথায় নয়, এবার বাস্তবেই দেখা মিলবে ডোডো পাখির

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
নিষিদ্ধ বইয়ের জাদুঘর, ইতিহাসের খণ্ডচিত্র ধরে রেখেছে এস্তোনিয়া