বিশ্বের ইতিহাসে ‘স্মার্টেস্ট’ ক্রিকেট টিম, দলে শার্লক এবং পিটার প্যান-স্রষ্টাও

পিটার প্যান ও শার্লক হোমস— এই দুই অন্যতম জনপ্রিয় ও অ্যাডভেঞ্চারাস চরিত্রকে ছাড়া অসম্পূর্ণ বিশ্ব-সাহিত্যের ইতিহাস। কিন্তু এমনই দুই চরিত্র যদি জুটি বাঁধে একসঙ্গে? শুনেই গায়ে শিহরণ খেলছে নিশ্চয়ই? না, তেমনটা হয়নি। তবে বাস্তবের মাটিতে জুটি বেঁধেছিলেন এই দুই জনপ্রিয় চরিত্রের স্রষ্টা— স্যর আর্থার কোনান ডোয়েল এবং জেমস ম্যাথু ব্যারি। তবে কারণটা শুনলে আরও অবাক হতে হবে। সাহিত্য নয়, বরং তাঁদের এক সূত্রে বেঁধেছিল ক্রিকেট!

হ্যাঁ, এমনই এক অধ্যায় লুকিয়ে রয়েছে ইউরোপীয় সাহিত্যের ইতিহাসে। শুরু থেকেই বলা যাক ঘটনাটা। ক্রিকেটের প্রতি স্যর জেমস ব্যারির আগ্রহ ছিল কৈশোর থেকেই। এমনকি ইউরোপের ছোটো-খাটো নানান ক্লাবে নিয়মিত ক্রিকেটও খেলেছেন তিনি। তবে ১৮৯০ সালে এক নতুন ফন্দি খেলে তাঁর মাথায়। পিটার প্যান প্রকাশিত না হলেও, ততদিন ব্রিটেনের সাহিত্যমণ্ডলে বেশ পরিচিতি পেয়ে গেছেন তিনি। দেশের খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের সঙ্গে আলাপও জমে উঠেছে তাঁর। ব্যারি এই সকল সাহিত্যিকদের নিয়েই আস্ত একটি ক্রিকেট দল তৈরির পরিকল্পনা করে ফেললেন। সেই মতো আমন্ত্রণপত্রও পৌঁছে গেল সাহিত্যিকদের কাছে। 

না, হতাশ হতে হয়নি ব্যারিকে। তাঁর অনুরোধে সর্বপ্রথম সাড়া দিলেন স্যর আর্থার কোনান ডোয়েল। তারপর একে একে বাড়তে থাকল খেলোয়াড়ের তালিকা। ‘দ্য জঙ্গল বুক’-স্রষ্টা রুডইয়ার্ড কিপলিং, রাফেল সিরিজের লেখক ইডব্লু হার্নাং, ফাদার ব্রাউন-স্রষ্টা জিকে চেস্টারটন, জেরোম কে জেরোম, হেনরি ফোর্ড, ইভি লুকাস, স্যর ওয়েন সিম্যান-সহ একাধিক খ্যাতনামা ব্রিটিশ সাহিত্যিক নাম লেখালেন ব্যারির দলে। দলে ছিলেন স্যর জন বার্নার্ডের মতো চিত্রকরও। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় জনা কুড়ি তো বটেই। 

দল তো হল। এবার নাম? আরবীয় শব্দবন্ধ ‘আল্লাহআকবর’-এর অনুকরণেই তিনি দলের নাম রাখলেন ‘আল্লাহআকবারিস’। আরবীয় বাক্যাংশটির প্রকৃত অর্থ ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’। তবে সঠিক অর্থ জানতেন না ব্যারি। তাঁর কাছে এর মানে ছিল ‘ওপরওয়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা’। আর সেই ভেবেই এই নামকরণ। 

আরও পড়ুন
গাছতলায় ‘মুঘল-এ-আজম’এর গান রেকর্ড; গানের পুস্তিকা লিখেছেন শার্লক হোমসও!

সে যাই হোক। ১৮৯০ থেকে ১৯১৩ সাল— টানা ২৩ বছর ব্রিটেনের বুকে অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল সাহিত্যিকদের এই ক্রিকেট দল। নেতৃত্ব দিতেন স্বয়ং ব্যারি সাহেব। মাঝে মাঝে কোচের ভূমিকাতেও দেখা যেত তাঁকে। এমনকি নিজের প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট দলের জন্য একটি মুখপত্রও প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। ‘আল্লাহআকবারিস সিসি’— জেমস ব্যারির প্রকাশিত ৪০ পাতার সেই বইয়ের কয়েক কপি আজও সংরক্ষিত রয়েছে রয়্যাল লাইব্রেরিতে। 

আরও পড়ুন
প্যারাস্যুটে গোপন বার্তা, ‘পার্সিভারেন্স’ রোভারের সঙ্গে জড়িয়ে শার্লক হোমসও!

তবে এ-কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই স্যর জেমস ব্যারি, কোনান ডোয়েল-সহ গুটি কয়েক সাহিত্যিক ছাড়া বাকিরা এই দলে যোগ দিয়েছিলেন স্রেফ উদ্দীপনার জেরেই। তাঁদের মূল দায়িত্ব ছিল খেলোয়াড়দের উৎসাহ প্রদান। ফলে, খেলার মাঠে সেই মতো সাফল্যের ডানা মেলতে পারেনি ‘আল্লাহআকবারিস’। তা সত্ত্বেও, ‘আল্লাহআকবারিস’-এর ম্যাচ দেখতে ভিড় জমাতেন সাহিত্য অনুরাগীরা। এমন চাঁদের হাটের দেখা পাওয়া তো আর মুখের কথা নয়!  জীবদ্দশায় কখনো না কখনো নিজেরাও এই ক্রিকেট খেলার সুখকর সময়ের কথা লিপিবদ্ধ করে গেছেন সংশ্লিষ্ট সাহিত্যিকরা। কিন্তু এসবের বাইরেও যে কথা বলার, সেটা হল— ব্যারির তৈরি এই দলকেই বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিভাবান বা স্মার্টেস্ট ক্রিকেট দল হিসাবে বিবেচনা করা হয় আজও…

Powered by Froala Editor