আয়তনে হিমালয়ের তিনগুণ, মহা-পর্বত ধ্বংসের সঙ্গে জড়িয়ে প্রাণের বিবর্তনের ইতিহাস

একসময় পৃথিবীতে বিরাট বিরাট সব সরীসৃপ ঘুরে বেড়াত, সেটা তো সকলেই জানি। কিন্তু তারও আগে ছিল উঁচু উঁচু পর্বতের (Mountains) যুগ। আকারে-আয়তনে যা আমাদের হিমালয়ের প্রায় ৩ গুণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেইসব পর্বত হারিয়ে গিয়েছে। তবে তার ভিতর দিয়েই প্রাণ পেয়েছে পৃথিবী। জীবজগতের বিবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই সময়ের সঙ্গে জড়িয়ে এইসব মহা-পর্বতগুলির ধ্বংসের মুহূর্ত। সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ‘আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই গবেষণাপত্র।

বর্তমানে পৃথিবীর সমস্ত পর্বত সৃষ্টি হয়েছে টেকটনিক প্লেটের (Tectonic Plates) সঞ্চালনের কারণে। তবে এইসব টেকটনিক প্লেট বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ছিল বিরাট বিরাট পর্বত। ভূতাত্ত্বিকরা যাকে মহা-পর্বত বা সুপার মাউন্টেইন বলেন। অনুমান করা হয় প্রাচীন গন্ডোয়ানা ল্যান্ডের উপর এইসব পর্বতের বিস্তার ছিল প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ আন্দিজ পর্বতের সমান অথবা হিমালয়ের তিনগুণেরও বেশি। আর উচ্চতাও ছিল মাউন্ট এভারেস্টের প্রায় ৩ গুণ। একটি পর্বত ছিল প্রায় ২ বিলিয়ন থেকে ১.৮ বিলিয়ন বছর আগে। আর অন্যটি ছিল প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে। মাটির নিচে পাওয়া নানা খনিজ থেকে সেই প্রমাণ মিলেছে। আর তার সঙ্গে দেখা গিয়েছে, প্রাণের বিকাশের সঙ্গেও এই দুই পর্বতের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে।

পৃথিবীতে যখন প্রথম জটিল জীবকোষের আবির্ভাব ঘটে, তখনই পৃথিবীর প্রথম মহাপর্বতটি ধ্বংস হয়েছিল। অন্যদিকে দ্বিতীয় মহাপর্বতের সময় শুরু হয় ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের। এই সময়েই বর্তমানের প্রাণী বর্গগুলির সৃষ্টি হয়। এমনটাই দেখিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক জিয়ি জু এবং তাঁর সহকর্মীরা। কিন্তু কেন এমন ঘটেছে? তারও সম্ভাব্য উত্তর দিয়েছেন গবেষকরা। প্রাণের অস্তিত্ব শুরু হয় সমুদ্রে। কিন্তু প্রথমদিকে সমুদ্রের জলে জীব জগতের বিস্তারের মতো খনিজ ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ ছিল না। তবে মহা-পর্বতগুলি যখন সমুদ্রের জলে সমাধিস্থ হয়, তখন নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদার্থের জোগান শুরু হয়।

তবে এই দুই ঘটনার মধ্যে আরও নানা যোগসূত্র থাকতে পারে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। আর সেইসব যোগসূত্র খুঁজে পেতে গেলে প্রয়োজন আরও গবেষণার। জিয়ি জু এবং তাঁর সহকর্মীদের গবেষণা কেবল প্রাথমিক সম্ভাবনার সূত্রটুকু ধরিয়ে দিতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন
প্রাচীন শিল্পকলাকে বাঁচানোর নয়া অস্ত্র ব্যাকটেরিয়া

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
যিশু নন, বড়োদিনে জন্মেছিলেন সূর্যদেব— এমনটাই বিশ্বাস ছিল প্রাচীন রোমানদের