প্রাচীন শিল্পকলাকে বাঁচানোর নয়া অস্ত্র ব্যাকটেরিয়া

মাঝেমধ্যে ছুটির সময়ে মিউজিয়াম বা কোনো প্রদর্শনশালায় গিয়ে যদি দেখা যায় তা বন্ধ, তাহলে খানিকটা বিরক্ত লাগে বৈকি! কিন্তু এই বন্ধ থাকার সময়টাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেই সময়ে প্রাচীন শিল্পকলাগুলির শরীর থেকে ময়লা অপসারণের কাজ চলে। এটা মোটামুটি সকলেই জানি। সাধারণত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়েই এই কাজ করা হয়। তবে বর্তমানে এসে গিয়েছে লেজার টেকনোলজির মতো সুবিধাও। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার (Bacteria) সাহায্যে শিল্পকলা সংরক্ষণ (Art Conservation)! তাও কি সম্ভব? সাম্প্রতিক বেশ কিছু সূত্রে উঠে এসেছে সেই তথ্যই। আর এই পদ্ধতিও নতুন নয়। ১৯৮০ সাল থেকেই বেশ কিছু শিল্পদ্রব্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে এই পদ্ধতি।

১৯৮০ সালে আমেরিকার লুইসভিল স্টেটে কেভ হিল সমাধিক্ষেত্রে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয় এই পদ্ধতি। সমাধিক্ষেত্রের প্রতিটা সমাধিস্তম্ভই পরিষ্কার করা হয় সেই বছর। পাথরের ফলকের উপর জমে থাকা তেল, কার্বন এবং অন্যান্য দূষক পদার্থ পরিষ্কার করার বিষয়ে রাসায়নিক প্রয়োগ ছাড়া অন্য কোনো পথ খুঁজছিলেন গবেষকরা। কারণ দীর্ঘদিন রাসায়নিক ব্যবহার করার ফলে পাথরের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। সেই প্রথম বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয় ডিসালফোভিব্রিও ভালগারিস নামের এক বিশেষ ব্যাকটেরিয়া।

সাধারণ জেলের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে তারপর শিল্পদ্রব্যের গায়ে সেই জেল মাখিয়ে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় পর সেই জেল মুছে নিলেই কাজ সম্পূর্ণ। ব্যাকটেরিয়া ততক্ষণে সমস্ত দূষক পদার্থ খেয়ে হজম করে ফেলেছে। লুইসভিলের পর ২০১৩ সালে ফ্লোরেন্স শহরে ‘অ্যালিগরি অফ ডেথ’ নামের একটি সমাধিফলকের উপরেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এরপর ইতালির বিভিন্ন প্রদর্শনশালাতেও একই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। এমনকি মাইকেল্যাঞ্জেলোর কিছু বিখ্যাত দেয়ালচিত্রও সংরক্ষণ করা হয়েছে একই পদ্ধতি। অবশ্য নানা ধরণের শিল্পদ্রব্যের জন্য নতুন নতুন ব্যাকটেরিয়ার সন্ধানও চলছে। এখন গবেষকদের হাতে অন্তত ১৫০টি ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি রয়েছে, নানা ধরণের দূষকের হাত থেকে যারা শিল্পদ্রব্যকে রক্ষা করতে পারে।

এর মধ্যে ভারতের বেশ কিছু গবেষণাকেন্দ্রেও শুরু হয়েছে এই পদ্ধতির প্রয়োগ। অবশ্য তা এখনও পরীক্ষামূলক স্তরেই রয়েছে। কিন্তু ভারতে এই পদ্ধতিতে কাজ শুরু হলে অনেক প্রাচীন স্থাপত্যকেই ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে। এমনকি তাজমহলের শরীরেও কার্বনের আস্তরণ জমতে শুরু করেছে। ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সেই স্তরও মুছে ফেলা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী গবেষকরা। আর ভারতের প্রত্ন গবেষণা সংস্থার পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। ব্যাকটেরিয়া মানে শুধুই রোগের সংকেত নয়, ইতিহাসকেও বাঁচিয়ে রাখতে পারে, তা কে জানত!

আরও পড়ুন
জেলখানাকে শিল্পক্ষেত্রের রূপ দিতে এগিয়ে এলেন ব্যাংকসি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কালি ছাড়াই ত্বকের ওপর শিল্পকর্ম, ‘ডার্মাটোগ্রাফিয়া’-র রহস্য কী?

More From Author See More