না খেয়ে একজন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে কদিন? কিংবা যদি অন্যভাবে যদি করা যায় প্রশ্নটা, এক বছরে কত কিলো ঝড়াতে পারে একজন? দুটি উত্তরই মজুত ছিল স্কটল্যান্ডের আঙ্গাস বারবিয়েরির (Angus Barbieri) কাছে। তিনি অনায়াসে বলতে পারতেন, টানা এক বছর ‘অভুক্ত’ থাকা সম্ভব। একই সঙ্গে কমিয়ে ফেলা যায় প্রায় ১২৫ কিলো ওজন! হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য শুনতে লাগলেও এরকমই এক রেকর্ড ছিল অ্যাঙ্গাসের।
১৯৬৬ সালের ১২ জুলাই। ‘শিকাগো ট্রাইবুন’-এর পাতায় ফলাও করে প্রকাশিত হল একটি খবর। একটি সিদ্ধ ডিম, মাখন সহযোগে দুটি পাউরুটির টুকরো আর এক কাপ নিয়ে বসে আছেন এক যুবক। ২৭-২৮ বছর বয়স তাঁর। পাশে দাঁড়িয়ে এক ডাক্তার। আর পিছনের দৃশ্যপট দেখে বোঝা যায় ছবিটি তোলা হয়েছে কোনো হাসপাতালে। নিতান্তই সাদামাটা একটি ছবি। এই নিয়ে অতো মাতামাতি করার কী আছে? এর আগে কি কেউ কখনও ডিম-পাউরুটি দিয়ে ব্রেকফাস্ট করেনি? কিন্তু এর গুরুত্ব অন্যখানে। ৩৮২ দিন পর প্রথমবার কোনো ‘শক্ত’ খাবার মুখে তুলতে চলেছেন অ্যাঙ্গাস। তার আগে জল আর চা ছাড়া কিছুই মুখে তোলেননি তিনি।
প্রায় এক বছর আগে যখন তিনি টেপোর্টের ম্যারিফিল্ড হাসপাতালে আসেন, তখন তাঁর ওজন ছিল ৪৭২ পাউন্ড বা ২১৪ কিলো। স্থূলতার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো রিপোর্ট পাওয়া না গেলেও, তা অ্যাঙ্গাসের মানসিক ও শারীরিক জীবনকে প্রতিদিন ক্ষতিগ্রস্ত করছিল। শরীরে বাসা বাঁধছিল বহু রোগ। সামাজিকভাবেও নানা গঞ্জনার শিকার হতে হচ্ছিল তাঁকে। তাই একদিন ঠিক করেন ওজন কমানোর। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত নিজের ‘চিকিৎসা’ নিজেই শুরু করে মানুষ। যার ফল হয় হিতে বিপরীত। সেই ভুল করলেন না অ্যাঙ্গাস। সোজা চলে গেলেন হাসপাতালে। ডাক্তাররা প্রথমে আপত্তি জানালেও নাছোড়বান্দা অ্যাঙ্গাসের কাছে হার মানলেন তাঁরা। ‘ডায়েট’ শুরু হল তাঁদের পরামর্শ মেনেই। রোজকার খাদ্যতালিকা থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ গেল মাংস, শাকসবজি, ফল। এমনকি হালকা জাতীয় কোনো খাবারও আর প্লেটে পড়ল না। শুধু জল আর চা-কফিই বরাদ্দ রইল তাঁর জন্য। অবশ্য মাঝেমধ্যে ডাক্তারের পরামর্শমত চায়ের মধ্যে দুধ বা চিনি দেওয়ার অনুমতি ছিল।
এভাবেই কেটে গেল ৩৮২ দিন। আঙ্গাসের ওজন এসে দাঁড়াল ৮৮ কেজিতে। অর্থাৎ গত একবছরে ওজন কমেছে প্রায় ২৭৬ পাউন্ড বা ১২৫ কিলো। তারপরই ডিম-পাউরুটি খেয়ে উপোস ভাঙেন অ্যাঙ্গাস। এর মাঝখানে তাঁর চাকরি চলে গেছে, প্রতিনিয়ত কথা বলতে হয়েছে ডাক্তারদের সঙ্গে। তবে এটাও ঠিক যে, আজকের দিনে এই ধরনের ‘চিকিৎসা’ হয়তো কোনো ডাক্তারই সমর্থন করবেন না। তখনও কিন্তু বিপদ ছিল যথেষ্ট। অ্যাঙ্গাসকে বারবার সাবধানও করেছিলেন তাঁরা। এর আগে অন্তত পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হয়েছিল একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে। আচমকাই হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছিল তাঁদের। কিন্তু নাছোড়বান্দা অ্যাঙ্গাসকে কে বোঝায়? অবশেষে তাঁর স্বপ্ন সত্যি হল একবছর পরে।
আরও পড়ুন
যে রোগের ‘গুজব’-এ বেঁচে গিয়েছিল বহু মানুষের প্রাণ
অনেকেই অবশ্য মনে করেন অ্যাঙ্গাস আসলে ভাগ্যবান। নাহলে এভাবে বেঁচে থাকা ছিল প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। ওই সময়ে তো বটেই, পরেও ডাক্তারদের দোষারোপ করেছেন অনেকে। সে যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত তাঁর শরীরে ব্যাপক কোনো প্রভাবও পড়েনি এই দীর্ঘ উপোসের। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন তিনি। শুধু একটাই সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল পরবর্তী জীবনে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পারিবারিক মাছের ব্যবসাতেই যুক্ত হন অ্যাঙ্গাস। কিন্তু ততদিনে তিনি খাবারের স্বাদ ভুলে গেছেন। যে খাবারই খান, সবই বিস্বাদ মনে হত। সুস্বাদু ছিল বলতে ছিল একমাত্র চা আর কফি। গত একবছরের অভ্যাসের মতো। ব্যাস, এটুকুই। নতুবা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করেছে অ্যাঙ্গাস।
আরও পড়ুন
বছরে তিনশো দিনই ঘুমিয়ে কাটান এই ব্যক্তি!
একই সঙ্গে লিখে দিয়ে গেছে ‘বিধিসম্মত সতর্কীকরণ’। অ্যাঙ্গাসের ঘটনা এক বিরলতম উদাহরণ। স্থূলতার মতো ক্রমবর্ধমান এক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষেত্রে তাঁর পদ্ধতি সম্ভবত সবচেয়ে কম গ্রহণযোগ্য। ‘ডোন্ট ট্রাই দিস অ্যাট হোম’-এর আদর্শ উদাহরণ হতে পারে অ্যাঙ্গাসের ঘটনা। তিনি স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন এই পথ, কত মানুষকে তো অনাহারের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে প্রত্যেকদিন!
Powered by Froala Editor