গোটা বিশ্বজুড়েই থাবা বসিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। বন্যা, খরা কিংবা ঘুর্ণিঝড়ের মতো চরম আবহাওয়ার শিকার হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। এবার জলবায়ু পরিবর্তনের জেরেই উপস্থিতি জানান দিল ৩৪০০ বছরের পুরনো ইরাকি নগরী (Iraqi Town)।
দজলা ও ফোরাত— ইরাকের এই দুই নদী গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস (Tigris River) নামে। এই দুই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন সভ্যতা, একাধিক প্রাচীন নগরী। এবার খরা-বিধ্বস্ত টাইগ্রিসের গর্ভ থেকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল তেমনই এক প্রাচীন শহর জাখিকু (Zakhiku)। ইরাকের কুর্দি অঞ্চলে মসুল বাঁধ সংলগ্ন অঞ্চলে জলের স্তর নেমে যাওয়ায় প্রকাশ্যে এল এই শহরের উপস্থিতি।
ইরাকের মিত্তানি সাম্রাজ্যের আমলে জাখিকু ছিল কেন্দ্রীয় শহর। তবে জাখিকু নিয়ে গবেষণা হয়েছে নিমিত্তমাত্র। বলতে গেলে, কালের আবহে সম্পূর্ণভাবেই মুছে গেছে মিত্তানি সাম্রাজ্যের অতীত। কাজেই এই শহরের আত্মপ্রকাশে সামনে আসতে পারে একাধিক রহস্যের সমাধান।
১৯৮০ সালে টাইগ্রিস নদীর ওপর তৈরি করা হয়েছিল মসুল বাঁধটি। তারপর থেকে একাধিকবার বার জলস্তর কমে যাওয়ায় মাথা চাড়া দিয়েছে এই নগরী। ২০১০ সালে প্রথম এই নগরীর উপস্থিতি লক্ষ করেন ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিকরা। তবে গবেষণা ও তার পরিচয় সনাক্ত করার আগেই তা তলিয়ে গিয়েছিল জলের তলায়। ২০১৯ সালেও ঘটে একই ঘটনা। সেবার যৌথভাবে গবেষণায় নেমেছিলেন ইরাক ও জার্মানির প্রত্নতাত্ত্বিকরা। তবে এই শহর যে মিত্তানি সাম্রাজের অংশ তা চিহ্নিত করতে পারেননি সে-বছর।
আরও পড়ুন
বিশ্বের ৬০ দেশের নাগরিক এই শহরের স্থায়ী বাসিন্দা!
চলতি বছরের জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই চরম খরার শিকার হয় টাইগ্রিস। তারপরই আবার পুনরুত্থান হয়েছিল প্রাচীন নগরীটির। তবে এবার খরার জেরে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকটাই সময় পেয়েছেন গবেষকরা। আর তার সুবাদেই প্রকাশ্যে এল এই নগরীর আসল পরিচয়। ইরাকের কুর্দিস্তান প্রত্নতত্ত্বসংস্থা এবং ফ্রেইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রস্তুত করা হয়েছে প্রাচীন শহরটির মানচিত্র। চলছে নগরীর ধ্বংসাবশেষের বিশ্লেষণও।
আরও পড়ুন
সৌদি আরবে বিশ্বের প্রথম অলাভজনক শহর, প্রকাশিত হল নীল-নকশা
গবেষকদের অনুমান, আনুমানিক ১৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভূমিকম্পের কারণে মাটির তলায় তলিয়ে যায় এই শহর। তারপর ক্রমশ সময়ের আবহে তাকে গ্রাস করে টাইগ্রিস নদী। অথচ, প্রায় তিন হাজার বছর জলের তলায় থাকার পরেও, এখনও অবিকৃত রয়েছে এই শহরের মূল কাঠামো। শহরের কেন্দ্রে প্রাসাদ ছাড়াও টাওয়ার, দুর্গ, প্রকাণ্ড প্রাচীর এবং শিল্পাঞ্চলও চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। আর সে-সব কিছুই তৈরি হয়েছিল সূর্যের তাপে পোড়ানো ইট দিয়ে। তাছাড়াও এই নগরী থেকে পাওয়া গেছে বেশ কিছু প্রাচীন কিউনিফর্ম ট্যাবলেট। এই ট্যাবলেট থেকে অ্যাসিরিয়ান সময়কালের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ্যে আসতে পারে বলেই অভিমত গবেষকদের। সবমিলিয়ে একুশ শতকে দাঁড়িয়ে হারিয়ে যাওয়া এক নগরীর পুনরুত্থান নতুন করে বিস্মিত করছে গোটা বিশ্বকেই…
আরও পড়ুন
৪০০০-এর বেশি ম্যুরালের বাসস্থান এই শহর!
Powered by Froala Editor