৪০০০-এর বেশি ম্যুরালের বাসস্থান এই শহর!

দেওয়ালচিত্র কিংবা ফ্রেসকোর কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ট্রেনো কিংবা পাদুয়ার ছবি। ইতালির এই শহরগুলিতেই রয়েছে রেনেসাঁ আমলের ঐতিহাসিক অসংখ্য দেওয়ালচিত্র। তবে সংখ্যার বিচারে দেখতে গেলে ইতালিকে বলে বলে গোল দেব ফিলাডেলফিয়া (Philadelphia)। হ্যাঁ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই শহর প্রায় ৪ সহস্রাধিক দেওয়ালচিত্রের বাসস্থান। 

বলতে গেলে, ফিলাডেলফিয়ার প্রতিটি গলিতেই কম-বেশি ফ্রেসকোর উপস্থিতি চোখে পড়তে বাধ্য। আমেরিকান ডেমোক্রেসির জন্মস্থান, চিজ স্টেকস কিংবা লিবার্টি বেলের মতো ফ্রেসকোও হয়ে উঠেছে এই শহরের অন্যতম প্রতীক। 

যদিও ফিলাডেলফিয়ায় ফ্রেসকোর চল বাড়ে হালের আমলে। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুকে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল গ্রাফিটি। দেওয়ালে স্প্রে-পেইন্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হত নানান ধরনের ছবি। কখনও প্রতিবাদ, কখনও আবার নিছকই বিনোদন— নানান আঙ্গিকই ধরা পড়ত গ্রাফিটিতে। তবে উত্তরোত্তর গ্রাফিটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হয় মার্কিন প্রশাসন। নিষিদ্ধ কিংবা সংরক্ষিত জায়গা, সরকারি সম্পত্তিও কখনও কখনও হয়ে উঠত গ্রাফিটি শিল্পীদের ক্যানভাস। 

এই সমস্যার সমাধান করতেই ৮০-র দশকে বিশেষ উদ্যোগ নেয় ফিলাডেলফিয়া সরকার। তৎকালীন মেয়র ডব্লু উইলসন গুডের অনুরোধে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিলাডেলফিয়া অ্যান্টি-গ্রাফিটি নেটওয়ার্ক বা ‘পিএজিএন’। না, শিল্পের কণ্ঠরোধ করতে চাননি তিনি। বরং, যত্রতত্র অবৈধভাবে আঁকা গ্রাফিটির চলকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিলেন। বিকল্প হিসাবে চালু করেছিলেন ম্যুরাল আঁকার রীতি। তাঁর হাত ধরেই শুরু হয় সিটি অফ ফিলাডেলফিয়া ম্যুরাল আর্ট নামে একটি বিশেষ প্রকল্প। বিশেষ বিশেষ কিছু অঞ্চলে দেওয়ালচিত্র অঙ্কনের জন্য নির্বাচন করে দেয় ফিলাডেলফিয়া সরকার। যা আঁকার সুযোগ পেতেন স্থানীয় গ্রাফিটি শিল্পীরাই। বিষয়টি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেশ কিছু অলাভজনক সংস্থা ও শিল্পী সংগঠনকেও। এই প্রকল্পই ক্রমশ বদলে যায় ফিলাডেলফিয়ার ছবি। 

বর্তমানে সবমিলিয়ে ৪ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল শোভা পাচ্ছে ফিলাডেলফিয়া জুড়ে। প্রতি বছরই বাড়ছে দেওয়ালচিত্রের সংখ্যা। স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নানান শিল্পীও তুলি ধরেছেন মার্কিন শহরকে সাজিয়ে তুলতে। কমেছে গ্রাফিটির সমস্যাও। 

পরিসংখ্যান বলছে ১০ হাজার জনেরও বেশি শিল্পী ম্যুরাল আর্টের জন্য বার্ষিক অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়ে থাকে সরকারের থেকে। তাছাড়াও প্রতিবছর হাজারেরও বেশি তরুণ শিল্পীকে ম্যুরাল আর্টস এডুকেশনের সুযোগ করে দেয় ফিলাডেলফিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, গড়ে প্রায় ২৫-৩০ হাজার ডলার খরচ হয় প্রতিটি ম্যুরাল নির্মাণে। শহরের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ম্যুরালটি নির্মিত হয়েছিল ৫ লক্ষ মার্কিন ডলারে। তাছাড়াও এই শহরেই রয়েছে ৮৫ হাজার বর্গফুট বিস্তৃত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যুরালও।

২০১৭ সালে ফিলাডেলফিয়ার এই ‘বর্ণময়’ চরিত্রকে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কোও। ‘সিটি অফ ম্যুরাল’ হিসাবে আন্তর্জাতিক পরিচিতি পায় ফিলাডেলফিয়া। অবশ্য এরও আগে ম্যুরালের সৌজন্যেই আমেরিকার প্রথম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সিটির তকমা পেয়েছিল এই শহর…

Powered by Froala Editor

More From Author See More