আমফানের তাণ্ডবে ছারখার দক্ষিণবঙ্গ, ক্ষয়ক্ষতিতে ছাপাতে পারে আয়লাকেও

আয়লার স্মৃতিকে আরো একবার উসকে দিল আমফান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপধ্যায়ের কথায়, বিধ্বংসী এই ঘূর্ণিঝড় কার্যত মুছে দিল দক্ষিণবঙ্গকে। স্থলভাগে আয়লার সর্বোচ্চ গতিবেগ যেখানে ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, সেখানে আমফান ধ্বংসলীলা চালাল ১৮০ কিলোমিটার গতিবেগে। কলকাতায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। তবে এখানেই কি শেষ? না! দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়াতে তাণ্ডব চালানোর পরও পুরোপুরি শক্তি হারায়নি সুপার সাইক্লোন আমফান। স্ট্যাটাস বজায় রেখেই এগিয়েছে উত্তরদিকে।

২১ তারিখ, অর্থাৎ আজ সকাল পর্যন্ত মূলত কার্যকরী থাকবে আমফান। রাতেই বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও তার প্রভাব বজায় আছে নদীয়া,, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনায়। অনেক অংশেই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ১০০-১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ায় নাজেহাল হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মেদিনীপুর। রেহাই পায়নি দুই দিনাজপুর এবং মালদাও।

ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে আয়লাকেও ছাপিয়ে গেছে আমফান, সন্দেহ করা হচ্ছে এমনটাই। কারণ এখনও পর্যন্ত কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হলেও বিপর্যয়ের পুরো ছবিই অধরা। আফটার শক না মিটলে হিসেব করা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলায়। নামখানা, পাথরপ্রতিমা, সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কুলতলী, বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙর, নন্দীগ্রাম, রামনগরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। প্রবল ক্ষতি হয়েছে খোদ কলকাতাতেও। অধিকাংশ জায়গাতেই ল্যাম্পপোষ্ট কিংবা গাছ ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই অনেক জায়গাতেই। নেই পানীয় জল-ও। পুকুর, চাষের জমি জলের তলায়।

বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি সামলে ওঠার আগেই বড় ঝড় বয়ে গেল রাজ্যের ওপর দিয়ে। আমফানের তাণ্ডবে বাস্তুহারা হলেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। পুরো পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক মোকাবিলা করে উঠতেও সময় লেগে যাবে ১০ থেকে ১২ দিন। নবান্ন থেকে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভীষিকাময় এই ঘূর্ণিঝড় এখনও সক্রিয় থাকবে বাংলার বেশ কিছু অংশে। আরো কত কী হারাতে হবে, হিসাব নেই তার। প্রকৃতির এই লীলা যেন লণ্ডভণ্ড করে দিল পুরো পশ্চিমবঙ্গকে। রিলিফ ক্যাম্পে থাকা, রক্ষা পাওয়া মানুষগুলোকে এখনো আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমফানের হিংস্রতা...

ছবি - ফেসবুক