রুক্ষ জমিতে সেচ বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন রাজস্থানের ‘ওয়াটার মাদার’

এদেশে কৃষিকাজের পরিসর সর্বত্র সমান নয়। গঙ্গা গোদাবরীর অববাহিকা যেমন আছে, তেমনই আছে রাজস্থানের মরুভূমিও। ফলে কোথাও যেমন জলের আধিক্য, আবার কোথাও জলের অভাবে কৃষিকাজ মার খায়। উন্নত সেচ ব্যবস্থা নিয়ে অনেক গবেষণার পরেও তার ব্যবহারিক উপযোগিতা খুব বেশি নয়। শ্রীমতি আমলা রুইয়া তাই আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছেন প্রাচীন ভারতের চিরাচরিত সেচ পদ্ধতিকে। আর এভাবেই তাঁর উদ্যোগে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বহু পরিত্যক্ত কৃষিক্ষেত্র।

নব্বইয়ের দশকে শ্রীমতি রুইয়া ছিলেন একজন গৃহবধূ। আর এই সময়েই তিনি শুনলেন রাজস্থানে খরার কথা। পরপর দুবছর কৃষিকাজ না হওয়ায় ভেঙে পড়েছে গ্রামের অর্থনীতি। গ্রামবাসীদের সাহায্য করতে সরকার এবং সামাজিক উদ্যোগগুলি ফসলের বীজ এবং জলের ট্যাংক পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু এভাবে তো কোনো স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। তাই তিনি ঠিক করলেন সেচ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আর এভাবেই গড়ে উঠল 'আকর'। ২০০০ সাল থেকে কাজ শুরু করে এই সংস্থাটি। আর গ্রামবাসীদের সাহায্য নিয়ে দেখতে দেখতে বদলে ফেলে রাজস্থানের চেহারা। এমনকি তার কাজের পরিসর এখন রাজস্থান ছাড়িয়ে অন্যান্য রাজ্যেও বৃদ্ধি পেয়েছে।

add

সেচ ব্যবস্থার জন্য রাজস্থানে প্রাচীন শাসকরা একধরনের বড় পুষ্করিণী বা কুণ্ড খুঁড়তে। সেইসব কুণ্ড দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। শ্রীমতি রুইয়া প্রথমেই এই কুণ্ডগুলি ব্যবহারযোগ্য করে তোলেন। তাতে নিয়মিত জলের সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। সেইসঙ্গে তৈরি করেন আধুনিক প্রযুক্তির চেক বাঁধ। আর এভাবেই ক্রমশ রাজস্থানের শুষ্ক পরিবেশেও চাষাবাদ সহজ এবং লাভজনক হয়ে ওঠে। মোট ৩০০ গ্রামের ৩ লক্ষ কৃষক এখন প্রতি বছর ৫০০ কোটির উপর লাভ করেন চাষাবাদ থেকে। তাঁর এই উদ্যোগের সুফল পেয়েছেন মহারাষ্ট্র, বিহার অথবা উত্তর প্রদেশের মানুষও।

আর এভাবেই শ্রীমতি রুইয়া পরিচিত হয়ে উঠেছেন ওয়াটার মাদার নামে। পেয়েছেন লখনৌ ন্যাশনাল লিডারশিপ পুরস্কার, দেবী পুরস্কারের মতো সম্মান। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার বোধহয় গ্রামবাসীদের ভালোবাসা। তাঁদের সাহায্য নিয়েই তাঁর উদ্যোগকে আরও প্রসারিত করতে পারবেন বলে আশা রাখেন আমলা রুইয়া।