শতাব্দী পেরিয়েও সটান ব্রিটিশ আমলের চিমনি, রয়েছে ‘বন্ধু’ বটগাছও

কলকাতা থেকে একটু দূরে গ্রাম বা মফঃস্বলে গেলে প্রায়শই চোখে পড়ে প্রাচীন অনেক মন্দির। কোথাও সেইসব মন্দিরের মাথায় গজিয়ে উঠেছে বট বা অশ্বত্থ। পুরনো দিনের এই স্থাপত্যগুলো গাছের ভার নিয়েই কীভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আজও, ভাবলে সত্যিই অবাক লাগে। প্রকাশ্য আসা এমনই এক ছবি আশ্চর্য করে দিল সকলকে। তবে কোনো মন্দির নয়, বৃদ্ধ এক চিমনির মাথায় বেড়ে উঠেছে একটি বটগাছ। জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসও।

উড়িষ্যার সমুদ্র থেকে পনেরো-কুড়ি কিলোমিটার দূরের ছোট্ট একটি গ্রাম ব্রাহ্মণপুর। এই অঞ্চলেই রয়েছে সেন্ট্রাল ওয়ারহাউস কর্পোরেশন। তবে ব্রিটিশ আমল থেকেই নানান পণ্যদ্রব্যের সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ব্রাহ্মণপুর। রয়েছে একাধিক গুদাম। ইংরেজরা তৈরি করেছিল রাইস মিলও। সেই কারখানাতেই ছিল একটি প্রকাণ্ড চিমনি। উচ্চতায় প্রায় একশো ফুট সেই চিমনিটি ছাড়া, ইটের দেওয়াল এবং চুন সুরকির গাঁথুনির সেই কারখানার কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট নেই আজ। এখন এই অব্যবহৃত চিমনিটির সারাক্ষণের বন্ধু একটি বটগাছ।

add

ছোটো ছোটো পোড়া মাটির ইটের তৈরি এই চিমনি। হদিশ নেই ঠিক কবে তৈরি হয়েছিল এটি। বয়সের দাগ স্পষ্ট সারা গায়ে। পলেস্তারা ঝরে যাওয়া ইটের পাঁজরের মধ্যে দিয়েই কোথাও কোথাও বেরিয়ে এসেছে লোহার বেড়। কিন্তু কথায় আছে ‘ওল্ড ইস গোল্ড’। তেমনই প্রবীণ এই চিমনিটিও হার মানিয়েছে পরিবেশের প্রতিকূলতা, ঘূর্ণিঝড়কেও। সুপার সাইক্লোন থেকে ফণী, চিমনিটিকে দোলাতে পারেনি কেউ-ই। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, চিমনির অমরত্বের আরেকটি কারণ ওই বটগাছ। গাছটির ঝুরি চিমনির দেয়াল বেয়ে নেমে এসেছে মাটিতে। আঁকড়ে ধরে রেখেছে প্রাচীন এই স্থাপত্যকে। তবে চিমনির দেওয়ালে ফাটল সৃষ্টি করেনি কোনো। পরস্পরের সখ্যতায় অস্তিত্বের লড়াই জারি রেখেছে দুই বন্ধুই।

সম্প্রতি আইএএস অফিসার, বিজয় কুলাঙ্গে তাঁর ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেন এই অবাক করা ছবি। মানুষকে বিস্মিত করতে অবকাশ রাখেনি প্রকৃতির এই খেলা। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় ছবিটি।

সভ্যতার হস্তক্ষেপ সবসময়ই বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রাণের অস্তিত্বের। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি তার। বছর কয়েক আগেই চেষ্টা চলেছিল এই প্রাচীন স্থাপত্য ধ্বংস করে ফেলার। পরিকল্পনা ছিল পরিত্যক্ত এই জায়গায় নতুন গুদাম গড়ে তোলার। তবে সফল হয়নি ওয়ারহাউস কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। তবে প্রতিবাদে সরব হয়েছিল গ্রামবাসীরা। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কর্তৃপক্ষ। পরে সারানোও হয় চিমনিটিকে। বর্তমানে ল্যান্ডমার্ক হিসাবেই ব্যবহৃত হয় এই চিমনিটি। সকলকে অবাক করে, ইতিহাসের জলজ্যান্ত সাক্ষ্য হিসাবে এভাবেই মাথা উঁচু করে থাক এই চিমনি। আর তাকে জড়িয়েই বেঁচে থাক প্রাণের অস্তিত্ব ও হাজার পাখির সংসার…