করোনা-আতঙ্কের সঙ্গে দারিদ্র্য, অপুষ্টি, চোরাশিকার – জর্জরিত আমাজনের অধিবাসীরা

গতবছরই তাঁদের বাড়ি-ঘর, চারিপাশের পরিবেশ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। লড়াই করেছিলেন সবাই মিলে। আজও লড়ছেন, কিন্তু উল্টোদিকে প্রতিপক্ষ আর একা নেই। এক অদৃশ্য ‘দৈত্য’ এসে হাজির হয়েছে তার সঙ্গে। সমস্ত কিছু শেষ করে দিচ্ছে। কথা হচ্ছে ব্রাজিলের অ্যামাজোনাস সম্পর্কে। করোনা ভাইরাসের থাবা পৌঁছে গেছে সেখানেও। কিন্তু সরকারের কোনো হুঁশ নেই। চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যেই জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে নিত্য লড়াই করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

অ্যামাজোনাসেরই একটি শহর মানাউস। ব্রাজিলের সপ্তম বৃহত্তম শহর। শহর হলেও, দেশের একটি প্রান্তে অবস্থিত। সমস্ত জায়গা থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখে তার অবস্থান। সেখানে আছে আমাজন, আছে ঘন জঙ্গল। সেখানেই নিজেদের মতো করে বেঁচে থাকার লড়াই লড়ছিলেন বাসিন্দারা। তার মধ্যেই জাঁকিয়ে ধরল করোনা। থাবা বসাল অ্যামাজোনাসেও। প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল। হওয়ারই কথা, কারণ এমনিতেই প্রশাসনের খুব একটা নজর নেই। প্রবল দারিদ্র্য, সঙ্গে অপুষ্টি— সব মিলে অবস্থা ইতিমধ্যেই খারাপ। করোনার এমনিতেই সহজ শিকার হয়ে উঠবে তাঁরা।

add

ঠিক সেটাই ঘটেছে মানাউস ও অ্যামাজোনাসে। এপ্রিল থেকে সেখানকার বিশাল সংখ্যক মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। সবাই করোনার শিকার নয়, কিন্তু এমন ঘটনা সত্য। তার ওপর ওই এলাকায় কোনো ডাক্তার, কোনো নার্স কিচ্ছু নেই। স্বাস্থ্য পরীক্ষাও অত্যন্ত কম হচ্ছে। মানাউসের মেয়রকেও বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, স্তুতিবাক্য নয়; এখন দরকার পিপিই, ভেন্টিলেটর ও ওষুধের। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বলসোনারো নিজের খেয়ালেই রয়েছেন। এদিকে ব্রাজিলের সংকট বেড়েই চলেছে ক্রমশ। বাধ্য হয়ে নিজেরাই সেলাই করে মাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করছেন বাসিন্দারা।

তার ওপর এই পরিস্থিতিতেও যাতায়াত চলছে চোরাশিকারি, অবৈধ খনি মালিকদের। পাঠকদের খেয়াল থাকবে, গত বছরেই আমাজনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গেছে। তারপর থেকে বন ধ্বংসের ঘটনা থামেনি, বরং বেড়েই চলেছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ— এই বছরের প্রথম তিন মাসে গাছ কাটার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫১ শতাংশ! সেই সঙ্গে অবৈধ ব্যবসায়ীদের আনাগোনা তো লেগেই আছে। এই করোনার বিপর্যয়েও তাঁরা আসছেন। তাঁদের মাধ্যমেই আরও রোগ বিস্তার হচ্ছে বলে মনে করছেন অ্যামাজোনাসের স্থানীয় প্রশাসন। দারিদ্র্য আরও জাঁকিয়ে বসেছে। সমস্ত দিক থেকে বিপদে পড়েছেন তাঁরা। অথচ, ব্রাজিল সরকারের মুখ বন্ধ! তাই উত্তর খোঁজার লড়াইয়ে নেমেছে অ্যামাজোনাস ও মানাউস।