মনিবের নির্যাতনে মৃতপ্রায় হাতি, অমানবিক ঘটনার সাক্ষী উত্তরপ্রদেশ

তার বয়স ২১ বছর। যথেষ্ট বড়ো হয়ে গেছে সে। কিন্তু স্বাধীনতাটুকু পায়নি। যে সময় খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর কথা, তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে তাকে। এসব সে মন থেকে করেছে তা নয়; বাধ্য হয়েই করতে হয়েছে। খাওয়াও জোটেনি এই দীর্ঘ সময়, দুর্বল থেকে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিল সে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা অবাক হয়ে যায় তাকে দেখে। এমনই অবস্থা জারার। কোনো মানুষ নয়, সে ২১ বছরের এক স্ত্রী হাতি…

জারার কথা হয়ত কেউ জানতেও পারত না। তার চিকিৎসা, জীবনে ফেরাও হয়তো হত না। যদি না একদিন উত্তরপ্রদেশ ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে তাকে নিয়ে যাওয়া হত। হাতিটির অবস্থা দেখে রীতিমতো শঙ্কিত হয়ে পড়েন বনকর্মীরা। তখনই জানা যায় তার এতদিনের জীবনের কথা। উত্তরপ্রদেশের আমরোহা গ্রামে মনিবের সঙ্গে ছিল হাতিটি। সেখানেই দিনের পর দিন চলে তার ওপর অত্যাচার। ওই গরমে রাস্তায় বের করানো, প্রবল খাটানো তো ছিলই; সেই সঙ্গে ছিল শারীরিক অত্যাচার। এমনকি খেতেও দেওয়া হত না ঠিক করে। যার ফল এতদিন ধরে জারার ওপর পড়েছে। শরীর ভেঙে গেছে তার। 

মথুরায় ভারতের প্রথম হাতিদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে একের পর এক রোগের লক্ষণ উঠে আসতে থাকে ডাক্তারদের সামনে। দেখা যায়, হাতিটির ওজন স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা কম। অপুষ্টি থাবা বসিয়েছে শরীরে। সেই সঙ্গে অস্টিওআর্থরাইটিসের মতো রোগ ব্যাপকভাবে গিলে ফেলেছে মস্ত শরীরটাকে। শরীরের নানা জায়গায় ঘা, পায়ে ক্ষত— রীতিমতো বীভৎস অবস্থা। এতদিনের পরাধীনতা ও অত্যাচারের চিহ্নগুলো ফুটে উঠেছে সেখানে। 

শেষ পর্যন্ত ডাক্তারদের দেখভালে মথুরাতেই আছে জারা। ঠিক হতে অনেকটা সময় লাগবে তার, জানিয়েছেন ডাক্তাররা। তবে এই স্বাধীনতা পেয়ে জারা যে অত্যন্ত খুশি, সেটা তার হাবেভাবেই বোঝা যাচ্ছে। পছন্দের তরমুজও খেতে পারছে সে। কিন্তু এই ঘটনা আবারও তুলে আনল আমাদের পাশবিক মনোভাবকে। গত এক মাস ধরে বন্যপ্রাণের মৃত্যুর খবর দেখা গেছে দেশ জুড়ে। হাতিদের মৃত্যুর খবরি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে এসেছে। ছত্তিসগড়ে একের পর এক হাতিমৃত্যু, তারপর কেরালার সেই ভয়ংকর ঘটনা— আমরা কি এরপরও শিক্ষা নেব না? এই প্রশ্নটাই তুলছেন পশুপ্রেমী থেকে প্রকৃতিবিদরা। উত্তর? জানা নেই…

Powered by Froala Editor