তিনি একজন সামান্য ক্রীতদাস। কতটাই বা গুরুত্ব! পড়াশোনাও করেননি। সেই তিনিই একদিন মুখে মুখে সমাধান করছিলেন কঠিন অঙ্ক! কোনও যন্ত্রের সাহায্য না নিয়ে, পুরো হিসবে মাথায় করে বলে দিচ্ছিলেন তিনি। চমক ভাঙল মনিবের। কী করে পারল এই ‘কালো’ মানুষটা? আর তখন থেকেই শুরু হল থমাস ফুলারের অঙ্কের যাত্রা।
তৎকালীন পশ্চিম আফ্রিকায় (অধুনা লাইবেরিয়া) জন্ম থমাস ফুলারের। সেটা আঠেরো শতকের সময়। দাসপ্রথা তখনও মুছে যায়নি। আমেরিকায় পুরোদমে চলছে তা। আর সেই দাসবৃত্তিরই নিয়তি ছিল আফ্রিকার কালো মানুষদের। থমাসও সেই ভাগ্যের শিকার হল। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই আমেরিকায় ক্রীতদাস হিসেবে জীবন শুরু হয় তাঁর। পড়াশোনার সুযোগ একেবারেই হয়নি।
আরও পড়ুন
জলজ প্রাণীদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা বিয়াস নদীতে, ভারতে প্রথম
তবে ভগবান যাকে দেন, তাঁকে সবকিছু মিলিয়ে দেন। একদিক থেকে মারলে, অন্যদিক থেকে বিশেষ কিছু ক্ষমতা দিয়ে দেন তিনি। থমাস ফুলারও নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। ক্ষমতা বলতে, অঙ্কের ক্ষমতা। কোনো ক্যালকুলেটর না ব্যবহার করে, স্রেফ মাথার ভেতরেই জটিল থেকে জটিলতর অঙ্কের সমাধান করে ফেলতেন এই নিরক্ষর ক্রীতদাসটি। আর এই ব্যাপারটাই তাঁর মনিবকে অবাক করেছিল। কিন্তু থমাস তো সামান্য ক্রীতদাস, কালো চামড়ার মানুষ! যখন ফুলার প্রায় ৭০ বছরের কোঠায়, তখন বেশ কিছু লোকের নজরে আসেন তিনি। অবশ্যই তাঁর এই অঙ্কের দক্ষতার জন্য। ক্রীতদাস বিরোধী আন্দোলনের নেতাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। থমাস ফুলার হয়ে ওঠেন ‘ভার্জিনিয়া ক্যালকুলেটর’। বলা ভালো, জীবন্ত ক্যালকুলেটর।
কিন্তু ক্রীতদাস ভাগ্য তাঁর পিছু ছাড়েনি। ১৭৯০ সালে, ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুর আগে অবধিও সেটাই করে গেছেন। যদি তিনি অঙ্ককে নিয়ে আরও এগিয়ে যেতেন, তাহলে কী হত? কোথায় পৌঁছতেন তিনি? উত্তর দেয়নি ইতিহাস।