তাঁরা নিজেরাই চাষ করেন। সিল্কের শাড়ি থেকে শুরু করে নানা জামাকাপড়ও বোনেন। তারপর বাজারে বা শিল্প-বাণিজ্য মেলায় নিয়ে গিয়ে বিক্রিও করেন। দশভুজার দশ হাতের মতো নানা দিক একা হাতে সামলাচ্ছেন তাঁরা। শুধু পর্দার পেছনেই আটকে নেই পরিশ্রম। বরং পূর্ণিয়ার এই ‘দিদি’দের স্বনির্ভরতার কাহিনি আজ অনেকের কাছে জলজ্যান্ত অনুপ্রেরণা।
বিহারের পূর্ণিয়া জেলা বহু আগে থেকেই রেশম বা সিল্ক উৎপাদনের জন্য পরিচিত। একটা সময় অবিভক্ত বাংলার অংশ ছিল এটি। পরে ব্রিটিশরা যখন বাংলা অধিকার করে, তখন রেশম ব্যবসার সুবিধার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেন। সেই সময়ই পূর্ণিয়া জেলার কিছু অংশ ও দিনাজপুরের কিছু অংশ মিলিয়ে তৈরি হয় নতুন একটি জেলা তৈরি হয়— মালদহ। সেটা অবশ্য অন্য গল্পের অংশ…
একটা সময় এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল কৃষক বিদ্রোহ দেখেছে। দেখেছে রেশম বিদ্রোহও। আর এর মধ্যে অংশ নিয়েছিল পূর্ণিয়াও। কাজেই এখানকার রেশম চাষের সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন থাকে না। কিন্তু সেসবই ছিল পুরুষতান্ত্রিক। এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয়। পূর্ণিয়াতেই তৈরি হয় একটি প্রতিষ্ঠান, ‘আদর্শ জীবিকা মহিলা মালবেরি প্রোডাকশন গ্রুপ’। নামেই বোঝা যাচ্ছে, সম্পূর্ণ মহিলাদের দ্বারা চালিত হয় এই সংস্থা। রেশম চাষের পরও থাকে রেশম বোনা। অর্থাৎ, রেশমকে বাজারজাত করা। আগে এই কাজে কোনো মহিলাই আসতেন না। তাঁদের কাজ ছিল শুধু মালবেরি গাছ থেকে রেশম-পোকার গুটি তোলা, পরে কিছু ক্ষেত্রে চাষ করা। তাতে তাঁদের হাতে খুব সামান্যই টাকা আসত।
আরও পড়ুন
পরিবহনের অভাবে মারা গিয়েছিলেন মা, গ্রামবাসীদের জন্য ‘বাইক-অ্যাম্বুলেন্স’ রাজডাঙার করিমুলের
‘আদর্শ জীবিকা’র মতো কো-অপারেটিভ গ্রুপ আসার পর অবস্থার বদলের শুরু। সেখানকার ‘দিদি’দের হাত ধরে পূর্ণিয়ার মেয়েরা নিজেদের কাজের ক্ষেত্র বাড়ানোর সুযোগ পান। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সরকারও। শুধু গুটি তোলাই নয়, রেশম দিয়ে শাড়ি ও পোশাক তৈরি করা এবং বাজারে গিয়ে সেটি বিক্রি করারও সুযোগ দেওয়া হয়। নানা ছোটো-বড়ো জায়গায় পৌঁছে গেছে পূর্ণিয়ার মেয়েদের হাতে বোনা শাড়ি। হাতে আসা টাকার পরিমাণও বেড়েছে আগের থেকে। সব মিলিয়ে, একটা ছোটখাটো ঝড় যে তুলেছেন তাঁরা, তা বলাই যায়।
এই পুরো সময় সমস্যাও এসেছে অনেক। ২০১৬ সালে ওই অঞ্চলে বন্যা হয়; সমস্ত জমি ডুবে যায়। ক্ষতি হয় অনেক। তাও ভেঙে পড়েননি তাঁরা। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়ে এসেছে এই পূর্ণিয়া, সেখানকার মেয়েরা কি কারোর থেকে কম হবে? সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথাতেও এঁরা উঠে এসেছেন। কিন্তু পথ আরও চলা বাকি। তাই, এখনও থামেননি পূর্ণিয়ার রেশম-মেয়েরা…