কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প, উদ্বাস্তু জীবন পেরিয়ে ৯৭ বছরে ঘর পেলেন ইহুদি মহিলা

দেখতে দেখতে জীবনের ৯৭টা বছর পার করে ফেলেছেন তিনি। এখন শুধুই মৃত্যুর অপেক্ষা। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও সেই কথাই বলেছেন এভলিন লিপম্যান। তবে এই শেষ সময়েও তাঁর জন্য অপেক্ষা করে ছিল এক বিরাট সুখবর। এই প্রথম মাথার উপর নিজস্ব ছাদ পেতে চলেছেন লিপম্যান। পেতে চলেছেন নিজস্ব বাড়ি। একসময় দিন কেটেছে অসউইৎজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই দিনগুলো আজও চোখের সামনে জীবন্ত এই ইহুদি মহিলার। তারপর দীর্ঘদিন উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে ঘুরে অবশেষে আশ্রয় মিলেছে ব্রিটেনে। কিন্তু সেখানেও থেকেছেন ভাড়া বাড়িতে। কোনোদিন নিজের বাড়ি করতে পারবেন, ভাবেননি লিপম্যান। অবশেষে অ্যাসোসিয়েশন অফ জিউইস রিফিউজি সংস্থার উদ্যোগে সেই অভাবিত স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।

১৯২৪ সালে ভিয়েনা শহরে জন্ম এভলিন গাটম্যানের। ছেলেবেলার দিনগুলো সুন্দর ছিল। কিন্তু দেখতে দেখতে হিটলারের ক্ষমতাবৃদ্ধি সবটা বদলে দিল। অন্যান্য ইহুদিদের মতোই একদিন এভলিনকেও যেতে হল কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। এমনকি জার্মানির সবচেয়ে বড়ো এবং কুখ্যাত অসউইৎজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পেও দিন কেটেছে তাঁর। তারপর একদিন সেখান থেকে গোপনে পালিয়ে গেলেন তিনি। কোথায় যাবেন, কিছুই জানেন না। শুনেছেন ইংল্যান্ড সরকার ইহুদিদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু কোন পথে যেতে হয় ইংল্যান্ড? বছর কুড়ির এভলিন তা চিনতেন না। ভরসা বলতে ছিল শুধু ছোটোদের ভূগোল বই থেকে ছিঁড়ে নেওয়া একটা ম্যাপের মাতা। সেটুকু দেখে দেখেই প্রায় ২ বছর পর পৌঁছে গেলেন লন্ডন শহরে। এর মধ্যে অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে। মিত্র শক্তির হাতে পর্যুদস্ত হয়েছে হিটলারের জার্মানি।

এভলিন আশ্রয় নিলেন লন্ডন শহরের উপকণ্ঠে একটি আবাসনে। সেই থেকে এখনও অবধি সেখানেই আছেন তিনি। কোনোদিন কোনো সরকারি অনুদানও নেননি। তিনি বলেন, ইংল্যান্ডের মানুষ তাঁকে আশ্রয় দিয়েছেন, এটুকুর জন্যই তিনি কৃতজ্ঞ। তবে জার্মানি থেকে কোনো অনুদান এলে তিনি তা নিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু এমন কোনো অনুদানের খবরই গিয়ে পৌঁছত না ইংল্যান্ডে। এর মধ্যেই কয়েক মাস আগে এভলিনের মেয়ে একটি সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন নিয়ে এসে দেখান। সেই বিজ্ঞাপনে অ্যাসোসিয়েসন অফ জিউইস রিফিউজি সংস্থা থেকে অনুদানের কথা বলা হয়েছিল। অবশ্য এটা যে সত্যি হতে পারে, সেটা বিশ্বাস করতে পারেননি এভলিন। তবু আশায় ভর করে আবেদন পাঠিয়েছিলেন। আর সেই আবেদনের ভিত্তিতেই সংস্থা এবছর তাঁর বাড়ি তৈরির যাবতীয় খরচ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। সংস্থার পক্ষ থেকে চিফ এগজিকিউটিভ মিশেল নিউম্যান জানিয়েছেন, অনেকের কাছেই হয়তো এখনও এই উদ্যোগের খবর পৌঁছয়নি। সারা ইউরোপ এবং আমেরিকাজুড়ে বহু ইহুদি শরণার্থী ছড়িয়ে রয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে আছেন তাঁরা। তাঁদের মৃত্যুর আগে যদি পৌঁছে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টাই করে চলেছে এই সংস্থা। তবে মানুষ আরও বেশি বেশি করে এই উদ্যোগের খবর প্রচার করলে তবেই তা সম্ভব। নাহলে অনেকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন শুধুই না পাওয়ার আর্তি নিয়ে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রয়াত আউশউইটজ যুদ্ধে অংশ নেওয়া শেষতম রুশ সৈনিকও