পিরামিডের নিচেই রয়েছে আস্ত গোলকধাঁধা, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর আশ্চর্য নজির মিশরে

প্রাচীন মিশরের ইতিহাস ও তার রহস্যের প্রতি অনেকেই আগ্রহী। ধু ধু মরুভূমির মধ্যে মাথা তুলে আছে পিরামিড। একের পর এক পুরনো গল্প, ফ্যারাওদের কাহিনি চোখের সামনে ভেসে আসবে। কিন্তু ইতিহাসেরও তো কিছু ব্যতিক্রম থাকবে। মিশরও তার থেকে আলাদা নয়। তথাকথিত পিরামিডের বাইরে গিয়ে এখানে রয়েছে আরও একটি আশ্চর্য। যেখানে ঢুকলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে আস্ত একটি ভুলভুলাইয়া…

পিরামিড কী করে তৈরি হয়েছিল, তার ইঞ্জিনিয়ারিংগত পদ্ধতি কী ছিল, অত পাথর কী করে আনা হত এবং ঠিকঠাক রাখা হত— তা আজও রহস্যের। তেমন কোনো লিখিত ডকুমেন্টও নেই। এতকিছুর বাইরে গিয়ে একটি বিশেষ পিরামিডের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন ঐতিহাসিকরা— সাকারা’র স্টেপ পিরামিড। সিঁড়ির ধাপের মতো স্থাপত্যটি মাথা তুলেছে। সামনে থেকে তো বটেই; ওপর থেকে দেখলে মুগ্ধ হওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। এর সঙ্গেই জুড়ে আছে প্রাচীন মিশরের আরও একটি ইঞ্জিনিয়ারিং আশ্চর্যের।

আনুমানিক ২৭০০ বছর আগে, মিশরের ফ্যারাও জোসের তাঁর অন্যতম সহচর ইমহোটেপকে একটি স্থাপত্য তৈরির আদেশ দেন। এমন কিছু তৈরি করতে হবে, যা মিশরে এর আগে কখনও হয়নি। ইমহোটেপ নিজে অত্যন্ত দক্ষ আর্কিটেক্ট ছিলেন। বুদ্ধি খাটিয়ে তৈরি করেও ফেললেন একটি স্থাপত্য। ত্রিভুজাকার একটি গঠন; কিন্তু সিঁড়ির মতো উঠে গেছে পুরো ব্যাপারটা। ঐতিহাসিকদের মতে, স্টেপ পিরামিডের ইতিহাসে এটিই সম্ভবত প্রথম। হয়ত সবথেকে পুরনো পিরামিডও এটি!

মূলত ফ্যারাও জোসের এবং তাঁর পরিবারেরই সমাধিক্ষেত্র এটা। একদম প্রথমে এটি চার ধাপে তৈরি হয়েছিল। পরে সেটা বেড়ে ছয় ধাপ করা হয়। সেটাই আমরা দেখি। তবে এ তো গেল বাইরের কথা। পিরামিডের ভেতরে যা রয়েছে, তা আর কোনো পিরামিডে দেখা যায় কিনা জানা নেই। একটি আস্ত ভুলভুলাইয়া! এটিও ইমহোটেপের আশ্চর্য দক্ষতার নিদর্শন। পিরামিডের ভেতর মূল সমাধিকক্ষ ছাড়াও আরও ছোটো ছোটো অনেক ঘর রয়েছে। প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে আছে এগুলো। আর এই সবগুলোকে মিলিয়েছে অনেকগুলি রাস্তা। যা তৈরি করেছে এক জটিল গোলকধাঁধা।

সব মিলিয়ে গোলকধাঁধাটির দৈর্ঘ্য ছিল ৫.৭ কিমি। কিন্তু গোলকধাঁধা তৈরির দরকার পড়ল কেন? গবেষকরা যখনই অন্যান্য পিরামিডের ভেতরে ঢুকেছেন, তখনই দেখেছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সোনা-দানা সব লুঠ হয়ে গেছে। হাতে গোনা কিছু পিরামিডের ক্ষেত্রে অক্ষত অবস্থায় সব পাওয়া গেছে। তুতেনখামেনের কথা আমরা জানি। আর একটি হল জোসেরের এই স্টেপ পিরামিড। আর তার অন্যতম কারণ হল এই গোলকধাঁধা। নিজেই একটা আস্ত সিকিউরিটি সিস্টেম; আসল জায়গায় পৌঁছনোর কাজটা সহজ ছিল না।

তবে রহস্যের এখনও একটা জায়গা বাকি আছে। আগেই বলা হয়েছে সাকারা’র এই স্টেপ পিরামিডটি ফ্যারাও জোসের ও তাঁর পরিবারের। অদ্ভুতভাবে যখন ভেতরে অনুসন্ধান চালানো হল, কোনো মমি পাওয়া গেল না! শুধু পাওয়া গেল দুটো জিনিস। একটি পায়ের হাড়— যেটা মনে করা হয় ফ্যারাও জোসের। আরেকটি কোমরের হাড়; বিশ্লেষণ করে জানা যায় সম্ভবত ফ্যারাওয়ের কোনো মহিলা আত্মীয়ের দেহাংশ হবে এটি। এইভাবেই ইতিহাস, রহস্য ও গোলকধাঁধা নিয়ে রয়েছে মিশরের এই পুরনো স্টেপ পিরামিড!