গালিবের চিঠি অনুবাদ করে সাহিত্য আকাদেমি-জয়ী পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অনুবাদের মাধ্যমে বাঙালির সামনে একের পর এক উর্দু সাহিত্যকীর্তি হাজির করেছেন সাহিত্যিক-অনুবাদক পুষ্পিত মুখোপাধ্যায় (Puspito Mukhopadhyay)। মির্জা গালিব থেকে শুরু করে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ, প্রত্যেকের জীবন ছুঁয়ে গিয়েছেন বারবার। আর তাঁর এই কাজের স্বীকৃতি হিসাবেই চলতি বছর সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার (Sahitya Akademi Prize) পেতে চলেছেন তিনি। অনুবাদ সাহিত্যে ২০২০ সালের সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রাপকদের নাম প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। আর সেখানে বাংলা অনুবাদক হিসাবে নাম রয়েছে পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়ের। গালিবের চিঠিপত্র সংকলনের বাংলা অনুবাদ ‘গালিব পত্রাবলী’-র জন্য পুরস্কৃত হতে চলেছেন তিনি।

২০১৫ সালে ‘প্রতিভাস’ থেকে প্রকাশিত হয় ‘গালিব পত্রাবলী’। উর্দু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মির্জা গালিব। শায়ের রচনার পাশাপাশি উর্দু গদ্যসাহিত্যের মেরুদণ্ডও তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। আর গদ্যসাহিত্যের ক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে বড়ো অবদান নিজের লেখা চিঠিপত্র। বাংলা অনুবাদের ভূমিকায় পুষ্পিত লিখেছেন, “ভারতবর্ষে যেহেতু দীর্ঘদিন ফারসি সরকারি ভাষা ছিল সেইজন্য পত্রলেখনের ভাষাও ছিল ফারসি। কেউ যদি উর্দুতে লিখেছে তাও ছন্দোবদ্ধ পদ্যের আকারে।” গালিব প্রথম সেই পথ ভেঙেছেন। সহজ প্রচলিত উর্দু ভাষাকেই বেছে নিয়েছেন চিঠি লেখার জন্য। পাশাপাশি অনুবাদক এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, “চিঠির আর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটাও যে, পত্রলেখকের জীবন সম্পর্কিত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই শাখাতেই পাওয়া সম্ভব।” গালিব নিজে তাঁর আত্মজীবনী লিখে যাননি। অথচ জীবনে অভিজ্ঞতার ঝুলি তো কম ছিল না। কোম্পানি শাসনের প্রথম পর্যায়ে একটু একটু করে মোঘল সাম্রাজ্যের পতন দেখেছেন তিনি। আবার ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহেরও সাক্ষী ছিলেন গালিব। এই সময়ের বর্ণনাই পাওয়া যায় তাঁর লেখা চিঠিপত্রগুলো থেকে। আর সেইসময়ের সঙ্গে, দিল্লি থেকে শুরু করে উত্তর ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে বাঙালির পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়।

‘গালিব পত্রাবলী’ ছাড়াও আলতাফ হুসেন আলির লেখা থেকে পুষ্পিত অনুবাদ করেছেন ‘গালিবের স্মৃতি’। নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের আত্মজীবনীমূলক লেখার অনুবাদ হিসাবে প্রকাশ করেছেন ‘পরিখানা’। এছাড়াও রয়েছে কুর্রতুল আয়েন হায়দারের গল্পসংকলন, জাকির হোসেনের ছোটোগল্পের অনুবাদ। তাছাড়া মান্টোকে নিয়ে তাঁর ধারাবাহিক একাধিক লেখা বাংলা-উর্দু সাহিত্যের মেলবন্ধনের এক গুরুত্বপূর্ণ সোপান হয়ে থেকে যাবে।

Powered by Froala Editor