দু’বছর বন্দি থাকার পর মারা গেল ‘পৃথিবীর নিঃসঙ্গ ডলফিন’ হানি

পশুপ্রেমীরা তার নাম দিয়েছিল ‘পৃথিবীর নিঃসঙ্গ ডলফিন’। সেই ‘হানি’ জাপানের একটি অ্যাকোয়ারিয়ামে বন্দি অবস্থাতেই চলে গেল পৃথিবী ছেড়ে।

বছর দুয়েক আগের কথা। জাপানি এক পশুপ্রেমীর তোলা ছবি ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল পৃথিবীতে। ২০১৮-র অক্টোবরে তোলা ওই ছবিতে, একটি পরিত্যক্ত পুলে দেখা গিয়েছিল ওই বটলনোস ডলফিনকে। ড্রোনের সাহায্যে ছবিটি তোলা হয়েছিল জাপানের ইনুবোসাকি মেরিন পার্কে। পার্কটি তখন কয়েক মাস ধরে বন্ধ। ইন্টারনেট প্রকাশের পরই প্রাণী অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন অনেকেই। তবে লাভ হয়নি কোনো।

‘হানি’ নামের ওই ডলফিনটি ছাড়াও, বেশ কয়েকটি পেঙ্গুইনকেও ফেলে রেখে চলে যাওয়া হয়েছিল। ওই পার্কের এক কর্মচারী কিছুদিন বাদে-বাদে এসে খাবার দিয়ে যেত তাদের। কিন্তু দিনের পর দিন একা থাকতে থাকতে খানিকটা ডিপ্রেসড হয়ে পড়ে ‘হানি’। সেই সঙ্গে গরমকালে সূর্যের তাপে ব্যাপক ক্ষতি হয় তার চামড়ায়। ক্রমাবনতি হতে থাকে তার স্বাস্থ্যের। এসব নিয়ে একাধিকবার প্রসঙ্গ উঠলেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি হানি’র। প্রায় দু’বছর এভাবেই থাকার পর, গত মাসের ২৯ তারিখে দেহ রাখল হানি।

ডলফিনরা সমুদ্রে পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ অঞ্চলে সাঁতার কেটে বেড়ায়। খেলা করে। নতুন নতুন জায়গার অন্বেষণ করে বেড়ায় দল বেঁধে। সেই সুযোগ যেহেতু ছিল না হানির, বার বার পুনরাবৃত্তি করতে দেখা যেত একই কাজ। এই বাঁধাধরা আচরণ আসলে বন্দি ডলফিনটির মানসিক চাপের লক্ষণ। এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

‘ডলফিন প্রোজেক্ট’-এর তরফ থেকে এপ্রিলের শুরুতেই হানি’র মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, এই সংস্থাই ২০১৮-তে প্রকাশ করেছিল হানির ছবি। তাছাড়া দীর্ঘ দু’বছর ধরে অক্লান্ত চেষ্টা করে গিয়েছিল হানি’র উদ্ধারের জন্য। চেয়েছিল, ২০০৫ থেকে ওই অ্যাকোরিয়ামে থাকার পর যেন শান্তিতে অবসর নিতে পারে হানি।

২০১৮-র নভেম্বর নাগাদ ওই সংস্থা জানতে পেরেছিল, ঋণ থাকার কারণে নানা বন্যপ্রাণী সহ ওই পার্কটি বিক্রি করে দিয়েছেন মালিক। ‘ডলফিন প্রোজেক্ট’ নামের ওই সংস্থা বার বার চেষ্টা করেছিল যাতে ‘হানি’কে ফিরিয়ে দেওয়া যায় স্বাভাবিক জীবন। পশু অধিকার বিভাগের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২০২০-র ফ্রেবরুয়ারিতেও কথা হয় তাদের। বেশ কয়েকটি মিটিংয়ের পর, মার্চের শেষে চুক্তিতে ঠিক করা হয় হানি’র ভাগ্য। কিন্তু ততদিনে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে আরও। দুর্ভাগ্যবশত, ২৯শে মার্চ অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা যায় হানি।

হানি’র মুক্তির জন্য জাপানে বড়োসড়ো প্রতিবাদ হলেও, তাকে শেষমেশ একাকিত্বকে সঙ্গে নিয়েই পৃথিবী ছাড়তে হল ছোট্ট জলাশয়ে। বন্দি অবস্থাতেই। হানির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশুপ্রেমীরা। কিন্তু হানি’র মতোই বন্দি অবস্থাইয় দিন কাটছে না জানি আরও কত পশুর। ‘ডলফিন প্রোজেক্ট’-এর মতো কোনো সংস্থা হয়তো এখনো খুঁজে বের করতে পারেনি তাদের। কিন্তু বন্যপশুদের প্রতি এই অমানবিকতার শেষ কোথায়, তা জানা নেই কারোর…