আমাজন রক্ষায় টহল আদিবাসী নারীদের গেরিলা বাহিনীর; কমছে চোরাশিকার, অরণ্যনিধন

ব্রাজিলের আমাজন নদীর দুইপাশে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে সবুজের আস্তরণ। পৃথিবীর ফুসফুসের ভেতর কতই না রহস্য লুকিয়ে আছে। আর এমন রহস্যই জীববিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের বারবার টেনে নিয়ে গেছে সেখানে। আমাজনের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনও করেছেন বহুবার। অথচ বিগত কয়েক বছর ধরে সেই পরিবেশই বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে সেখানকার অরণ্য এবং প্রাণীরা। তবে এমন পরিস্থিতিতেও আশার আলো দেখাচ্ছেন আমাজনের আদিবাসী মানুষরা। তাঁদের ঘর রক্ষার জন্য আন্দোলনের রাস্তা যেমন বেছেছেন, তেমনই নিজেরাই আমাজনকে সুরক্ষিত রাখার শপথ নিয়েছেন। আর সেখানেই আড়াল ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন মহিলারা। পরিবেশ আন্দোলনের রাস্তায় দলবেঁধে নেমে পড়েছেন তাঁরা।

ব্রাজিলের মারানহাও রাজ্যের অন্যতম আদিবাসী গোষ্ঠী গুয়াজাজারা। আমাজনের সবুজ অরণ্যই তাঁদের ঘরবাড়ি, তাঁদের সবকিছু। যুগ যুগ ধরে তাঁরা রক্ষা করে আসছে এইসব অঞ্চল। কিন্তু বিগত বছরগুলোয় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে অনেকটা। আমাজনের বিধ্বংসী আগুনের রেশ পৌঁছেছে এখানেও। মারানহাও-সহ ব্রাজিলের বেশ কিছু জায়গায় ক্রমশ কমে আসছে সবুজের সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে, এইসব জায়গায় গাছ কাটার সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। জমি ফাঁকা হতেই সেখানে নজর পড়ছে পুঁজিপতিদের। ফলে জঙ্গলের শান্ত পরিবেশ ক্রমশ বিঘ্নিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে চোরাশিকারের সংখ্যাও। সমস্ত কিছু মিলিয়ে মারানহাও রাজ্যের পরিবেশ পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক।

এমন অবস্থাতেই এগিয়ে এসেছে গুয়াজাজারা গোষ্ঠীর মানুষরা। এই জঙ্গল তাঁদের; কাজেই রক্ষাও করতে হবে সমস্ত শক্তি দিয়ে। আর এখানেই উঠে আসছে নারীদের জয়গান। গুয়াজাজারা গোষ্ঠীর মহিলারা এগিয়ে এসেছেন ‘ফরেস্ট গার্জিয়ান’ হিসেবে। ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে দলবেঁধে চলে জঙ্গলের টহলদারি। বিজ্ঞানের সহায়তাও নিচ্ছেন তাঁরা; রয়েছে স্যাটেলাইট টেকনোলজি। আর এসব নিয়েই চলছে জঙ্গল বাঁচানোর কাজ। ঠিক ছয় বছর আগে যখন এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন আদিবাসী মেয়েদের এইভাবে এগিয়ে আসার ঘটনা একপ্রকার বিরলই ছিল। পরে তাঁদের দেখেই একজন দুজন করে আরও মহিলারা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। আজ এই মহিলা ‘গেরিলা বাহিনী’র সদস্যের সংখ্যা বেড়ে গেছে অনেক। মন্ত্র কিন্তু সেই একটাই— ঘর বাঁচাও। সবুজ বাঁচাও।

আজ মারানহাওয়ের অনেক জায়গাতেই চোরাশিকার বন্ধ হয়ে গেছে। জমি সংক্রান্ত সমস্যা, গাছ কাটার সংখ্যাও কমছে একটু একটু করে। যার সিংহভাগ কৃতিত্ব গুয়াজাজারা গোষ্ঠীর মহিলাদের। তাঁরাও তো মা! এই জঙ্গল তো তাঁদের ঘরবাড়ি। যদি তাঁরা এগিয়ে না আসেন, তাহলে এসব একদিন ধুলোয় মিশে যাবে। কাজেই মা হয়ে আরেক মা–কে আগলে রাখছেন তাঁরা। একদিকে পরিবেশ রক্ষা, অন্যদিকে নারীশক্তির জয়— এইভাবেই বদল দেখছে ব্রাজিল। এই মানুষগুলোর জন্যই এখনও আশা দেখতে পাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। সবাই মিলে একসঙ্গে চললে একদিন জয় আসবেই। 

আরও পড়ুন
শুধুমাত্র জুলাইতেই ধ্বংস হয়েছে সাও-পাওলোর থেকেও বৃহৎ বনভূমি, সংকটে আমাজন

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আবারও দাবানলের গ্রাসে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ আমাজন, গত বছরের তুলনায় তীব্রতা ২৮% বেশি