গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছোয়নি এখনও, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চমক উত্তরাখণ্ডের প্রিয়াঙ্কার

উত্তরাখণ্ডের এক প্রত্যন্ত গ্রাম রামপুর। এই ২০২০ সালেও সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। সবথেকে কাছের সড়কটাও গ্রাম থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। আর সেই গ্রামের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা সেখানেই। কিন্তু এইসব প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিল প্রিয়াঙ্কা। ২৮ বছর বয়সে প্রথম প্রচেষ্টাতেই ইউনিয়ন সিভিল সার্ভিস কমিশনের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। সারা দেশের লক্ষ লক্ষ প্রতিযোগির মধ্যে ২৫৭তম স্থান দখল করেছেন কুমারী প্রিয়াঙ্কা।

জন্ম থেকেই লড়াই করতে হয়েছে পড়াশোনার জন্য। রামপুর গ্রামে ভালো স্কুল বলতে কিছুই নেই। বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই কিছুদূর পড়াশুনোর পর স্কুল ছেড়ে দেয়। কিন্তু কুমারী প্রিয়াঙ্কা পড়াশুনো ছাড়তে পাড়েননি। কিছুদূরে একটি হাইস্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। তখনও স্কুল ছুটি হলেই বাড়ি ফিরে চাষের ক্ষেতে ছুটতেন প্রিয়াঙ্কা। তারপর হাত লাগাতেন বাবার সঙ্গে। প্রিয়াঙ্কার কথায়, সেটাই যে তাঁদের রোজগারের একমাত্র রাস্তা। এখনও সময় পেলেই বাবার সঙ্গে চাষের কাজে হাত লাগান তিনি।

হাইস্কুলের পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি থেকে ১১৫ কিলোমিটার দূরে গোপেশ্বর শহরে সরকারি কলেজে পড়া শুরু করেন তিনি। সেখান থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশুনো শেষ করে ভর্তি হলেন ল-কলেজে। অবশ্য এই সময় পড়ার খরচ তাঁকেই চালাতে হত। প্রথম প্রথম ৪০ জন ছেলেমেয়েকে টিউশন পড়াতেন তিনি। পরে পড়ার চাপে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কমাতে হয়। এখন তাঁর পড়ুয়ার সংখ্যা ২০ জন।

প্রিয়াঙ্কার কথায়, সারাজীবন লড়াই করে বড়ো হয়েছেন বলেই তিনি জানতেন প্রতিটা যুদ্ধেই তাঁকে সফল হতে হবে। আর এবার তিনি এমন একটা মঞ্চ পেলেন, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর মতো অন্যান্য পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু এই সুখবরও পরিবারের মানুষদের কাছে পৌঁছে দিতে দুদিন সময় লেগে গেল প্রিয়াঙ্কার। ফল প্রকাশের দিন তিনি নিজে দেরাদুনে। গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল যোগাযোগের সিগন্যালও দুর্বল। আবার দ্রুত সেখানে পৌঁছে যাওয়াও সম্ভব নয়। কিন্তু ইউপিএসসির ফল প্রকাশিত হয়েছে খবর পেয়ে প্রিয়াঙ্কার বাবা পৌঁছে গেলেন স্থানীয় পাহাড়ের উপরে। সেখানে মোবাইলের সিগন্যাল খানিকটা আসে। আর তারপরেই প্রিয়াঙ্কা তাঁকে নিজের সাফল্যের কথা জানালেন। পরিবারের কাছে এই খবর যেন এক উৎসবের মেজাজ এনে দিল। এবার হয়তো তাঁদের জীবনের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের অবসান হতে চলেছে। এবার কি স্বস্তির নিঃশ্বাস পেতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা? নাকি তাঁর জীবনে শুরু হল এক নতুন লড়াই, যেখানে সমস্ত পড়ুয়ার জন্য পড়াশুনোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা তাঁর দায়িত্ব?

Powered by Froala Editor