শিক্ষাব্যবস্থায় বড়োসড়ো রদবদল, গুরুত্ব হারাচ্ছে দশম শ্রেণীর পরীক্ষা; ফাঁক পড়বে আঞ্চলিক শিক্ষায়?

এবার আগাগোড়া পাল্টে যাচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই দেশের শিক্ষানীতির বদলের জন্য একটি কমিটি তৈরি করেছিল মন্ত্রিসভা। সেই কমিটির তৈরি খসড়াতেই এবার সরকারি শিলমোহর চাপাল কেন্দ্র। বদলে গেল ‘কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক’-এর নামও। 

কী বলছে গত ৩৪ বছরের শিক্ষানীতির এই আকস্মিক পরিবর্তন? কেমনই বা হতে চলেছে এই শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো? ৫+৩+৩+৪। চালু হতে চলেছে ১৫ বছরের এই কাঠামোই। প্রথম পাঁচ বছরে জোর দেওয়া হচ্ছে মাতৃভাষার শিক্ষায়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়াশোনাকে রাখা হয়েছে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ফাউন্ডেশন কোর্স। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে চালু করা হবে বৃত্তিমূলক শিক্ষা। পাশাপাশিই পাঠ্যসূচিকে সংক্ষিপ্ত করে কমিয়ে এনে মূল ধারণাটুকু তুলে দেওয়া হবে ছাত্র-ছাত্রীদের। পরীক্ষায় নম্বরের পরিবর্তে প্রাধান্য দেওয়া হবে ছাত্রদের যোগ্যতা এবং দক্ষতায়। পাশাপাশি মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিককে এক করে দেওয়া হল। থাকছে না কলা, বিজ্ঞান এবং বাণিজ্যের কোনো বাঁধা-ধরা বিভাজনও। ছাত্ররা নিতে পারে একাধিক শাখার অধিনস্ত বিষয়। প্রস্তাব দেওয়া হল মোট ৮ সেমিস্টারের বোর্ড পরীক্ষার কর্মসূচী। কার্যত গুরুত্ব হারাল দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা। 

অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এল আমূল বদল। দেশের ৪৫ হাজার কলেজেরই শিক্ষা ব্যবস্থা একটিই নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাতার তলায় আসতে চলেছে। তবে আইন এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে বজায় থাকছে না এই নিয়ম। সেই সঙ্গেই কেন্দ্র লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, যাতে ২০৩৫ সালের মধ্যে স্কুলস্তরের ৫০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীরাই ভর্তি হতে পারে উচ্চশিক্ষার জন্য। উঠে গেল এম.ফিলও। পাশাপাশি নতুন এই শিক্ষা ব্যবস্থায় হতে পারে ১ অথবা ২ বছরের স্নাতকোত্তরের সংস্থান।

ইতিমধ্যেই এনসিআরটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্কুলস্তরের শিক্ষার সিলেবাস তৈরির জন্য। কিন্তু নতুন এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঘিরে থেকে যাচ্ছে ধোঁয়াশা। যদি সারা দেশের সমস্ত ছাত্রদের জন্যই একই পাঠক্রম হয় প্রাথমিক স্তর থেকে, তবে কি আঞ্চলিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ফাঁক থেকে যাবে? উঠছে এই প্রশ্নই। দেশের ইতিহাস, ভূগোল জানার আগে প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের আঞ্চলিক সংস্কৃতি, ভূগোল এবং ইতিহাস শিক্ষার জোর দেওয়া হত। সেই গুরুত্ব কি বজায় থাকবে আগের মতো? 

পাশাপাশিই নবম শ্রেণী থেকেই ছাত্রছাত্রীরা স্বাধীনতা পাবে পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার। আগে এই স্তরে সার্বিকভাবে প্রতিটি বিষয়ের ওপরে ভিদ তৈরি হত। তার ওপরেও কি প্রভাব পড়বে না এই নতুন শিক্ষানীতিতে? অষ্টমশ্রেণীর একজন ছাত্র পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার জন্য সত্যিই কি ততটা পরিণত? বা পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার আগে সে কতটা সুযোগ পাবে সমস্ত বিষয়গুলিকে চিনতে পারার, সন্দেহ থাকছে সেই ব্যাপারেও। পরবর্তীকালে এই ‘চাপিয়ে দেওয়া’ সিদ্ধান্তের জন্য অসুবিধায় পড়তে হতে পারে ছাত্রদের, বাড়ছে সেই সম্ভাবনা।

যদিও মাল্টিপল এন্ট্রি এবং এক্সিটের সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই নতুন শিক্ষানীতিতে। অর্থাৎ পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়লেও কোনো ছাত্র পরবর্তীতে সুযোগ পাবে রসায়ন, ডিজাইনিং কিংবা সঙ্গীত নিয়ে পড়ার। কলেজে ভর্তি হওয়া এবং বেরিয়ে যাওয়াটাও অনেকটাই ঐচ্ছিক করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন
রাজনৈতিক নেতা হবেন সংকীর্ণ ধর্মগুণের ঊর্ধ্বে, এমনই শিক্ষা দেয় মহাভারত

বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। ভারতের মূল দর্শন দাঁড়িয়ে রয়েছে এই বৈচিত্র্যের উপরেই। আঞ্চলিক শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যে বৈচিত্র্য, সেটাই যদি আর না থাকে পরবর্তীতে; যদি সমস্ত অঞ্চলেই শিক্ষার পরিকাঠামো, পাঠক্রম একই হয়ে যায়, তবে কি খর্ব হবে না সংস্কৃতির আদানপ্রদানের মাধ্যমও? জানা নেই...

Powered by Froala Editor

More From Author See More