৩০ বছর পর ফেরা পড়াশোনায়, ঠাকুমার উচ্চ-মাধ্যমিক পাশের খবরে উচ্ছ্বসিত নাতনিরাও

৫০ বছরের লাকিনটিউ সাইমিলেহ। মেঘালয়ের একটি ছোট গ্রামে ছেলেমেয়ে এবং দুই নাতনিকে নিয়ে তার সংসার। সেই লাকিনটিউ ছিলেন এবারের মেঘালয় রাজ্য হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট পরীক্ষার কলাবিভাগের ২৪২৬৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজন। ঘটনাটা আমাদের একটু অবাক করে ঠিকই। কিন্তু লাকিনটিউ মনে করেন, শিক্ষাই মানুষকে প্রকৃত পরিচয় দেয়। শিক্ষার আলো ছাড়া আমরা কিছুই নই। আর শিক্ষার যে কোনো বয়স থাকে না, সেকথা তো আমরা সকলেই জানি।

তবে ছোটোবেলা থেকেই একেকজনের একেকটি বিষয়ের উপর ভীতি থাকে। ঠিক যেমন লাকিনটিউর ভীতি ছিল অঙ্ক নিয়ে। আর ঠিক সেই কারণেই ১৯৮৯ সালে সেকেন্ডারি পরীক্ষার পর তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারপর ২১ বছর বয়সে তাঁর বিবাহ হয়ে যায়। চারটি সন্তানেরও জন্ম হয়। কিন্তু সেই বৈবাহিক সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি। তারপর ছেলেমেয়েদের একাই মানুষ করতে থাকেন লাকিনটিউ সাইমিলেহ। এসবের মধ্যে পড়াশুনোর স্বপ্ন কোথায় যেন চাপা পড়ে যায়। কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসীদের ছোটো ছোটো ছেলেময়েদের খাসি ভাষা শেখাতে গিয়ে আবারও সেই স্বপ্ন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তিনি ঠিক করলেন, আবারও প্রথাগত পড়াশুনোর মধ্যে ফিরতে হবে।

স্কুল ইউনিফর্ম পরে নিয়মিত হাজিরাও দিতে থাকেন লাকিনটিউ। ক্লাসে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত বাকি পড়ুয়াদের বয়স অন্তত ৩০ বছর কম। তারা লাকিনটিউকে ডাকে 'মেই' অর্থাৎ খাসি ভাষায় যার অর্থ মা। কিন্তু এসব কোনোকিছুই তাঁর প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হয়নি। আর সোমবার পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দিল, এই স্বপ্ন পূরণের লড়াইতে তিনি সফল।

লাকিনটিউর সাফল্যে এখন পরিবারে খুশির হাওয়া। ছেলেময়ে, দুই নাতনি সকলেই আনন্দিত। আর লাকিনটিউ সাইমিলেহ নিজেও ঠিক করে নিয়েছেন, এখানে থেকে থাকলেই চলবে না। এরপর তিনি খাসি ভাষা নিয়ে স্নাতক স্তরের পাঠক্রমে ভর্তি হবেন। তারপর হয়তো স্নাতকোত্তর স্তরেও যাবেন। একধাপ একধাপ করে এগিয়ে যাবেন স্বপ্নের কাছাকাছি। বয়স তো একটা সংখ্যা মাত্র।

Powered by Froala Editor