জলের অভাবে মৃত অসংখ্য বন্যপ্রাণী, ভয়াবহ খরার শিকার কেনিয়া

শুকিয়ে গেছে তৃণভূমি। শুকনো প্রান্তরে ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ। কেনিয়ার (Kenya) ছবি বর্তমানে এমনটাই। বিগত চার দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ খরার (Drought) শিকার কেনিয়া। বিগত তিন মাসে এক ধাক্কায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বন্যপ্রাণীর (Wild Animals) মৃত্যুর হার। পাশাপাশি খরার কারণে মানুষের সঙ্গেও সংঘাত বাড়ছে তাদের।

কেনিয়া গ্রেভি’স জেব্রার সবচেয়ে বড়ো আবাসস্থল। বিশ্বজুড়ে বিরল প্রজাতির এই জেব্রার সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার। যার মধ্যে আড়াই হাজার গ্রেভি’স জেব্রার বাসস্থান কেনিয়া। অথচ, খাদ্য এবং পানীয়ের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে তারা। কেনিয়া সরকার এবং কেনিয়ার ‘গ্রেভি’স জেব্রা ট্রাস্ট’-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত সপ্তাহে ৪০টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি সপ্তাহে ১ শতাংশ কমেছে জেব্রার সংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অবলুপ্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে এই প্রজাতিটি। 

তবে শুধু জেব্রাই নয়। হাতি, হিরোলা, সেবন ও রোয়ান অ্যান্টিলোপ-সহ একাধিক প্রজাতির প্রাণীর মধ্যেই দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে ৫০টির বেশি হাতি। হাতির মৃত্যুর এই হার স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ২৫ গুণ বেশি। অরণ্য এবং তৃণভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চল শুকিয়ে যাওয়ায় খাদ্যের সন্ধানে অধিকাংশ সময়েই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বন্যপ্রাণীরা। এমনকি হাতির তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি জায়গায় ধ্বংস হয়েছে শস্যাগার। জলের অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে কেনিয়ায়। বড়ো মাত্রার দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় ভুগছে পূর্ব আফ্রিকার দেশটি। তার মধ্যে সঞ্চিত শস্যভাণ্ডারে বন্যপ্রাণীরা আক্রমণ করলে, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা গবেষকদের।

অন্যদিকে বন্যপ্রাণীদের এই সংকট প্রভাবিত করছে সে-দেশের অর্থনীতিকেও। কেনিয়ার অর্থনীতির একটা বড়ো অংশ নির্ভর করে পর্যটন শিল্পের ওপর। প্রতিবছর সেখানকার অভয়ারণ্য ও বন্যপ্রাণী পরিদর্শনের জন্য হাজির হন অসংখ্য বিদেশি পর্যটক। আজ এইসব অভয়ারণ্যে ছড়িয়ে রয়েছে মৃত পশুপাখির শবদেহ। দুর্গন্ধে সেখানে টিকে থাকাও দায় মানুষদের। ফলে, ক্রমশ কমছে পর্যটকদের আনাগোনা। পাশাপাশি পচনশীল দেহ থেকে বিভিন্ন রোগ ছড়ানোর আশঙ্কাও বাড়ছে ক্রমশ। 

পরিস্থিতি বাগে আনতে ময়দানে নেমেছেন কেনিয়ার রেঞ্জাররা। তবে বিস্তীর্ণ অরণ্যের চেহারা রাতারাতি বদলে ফেলে আদৌ কি সম্ভব মানুষের পক্ষে? প্রাথমিকভাবে তাঁদের লক্ষ্য, প্রাণীমৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে আনা। খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ করতে অভয়ারণ্যগুলিতে জায়গায় জায়গায় তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম জলাশয়। তাছাড়াও সেখানে গুড়, খড়, লবন ও ক্যালশিয়ামের সরবরাহ বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রেঞ্জাররা। তবে মাস দুয়েকের মধ্যে বৃষ্টি না হলে, কোনোভাবেই আয়ত্তে রাখা যাবে না পরিস্থিতিকে। সে ব্যাপারে সতর্ক করছেন তাঁরা… 

Powered by Froala Editor