শুধুমাত্র তাঁর বই নিয়েই আস্ত লাইব্রেরি; হারুকি মুরাকামি-কে বিরল সম্মাননা জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের

কেবলমাত্র একজন লেখকেরই বই। আর তা দিয়েই তৈরি একটা গোটা লাইব্রেরি। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরলতম। বা নেই বললেই চলে। এবার এমনটাই হতে চলেছে জাপানে। টোকিও-র ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুলতে চলেছে একটি বিশেষ গ্রন্থাগার, যাতে সংরক্ষিত হবে কেবলমাত্র জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামির রচনাসমগ্র।

বর্তমান বিশ্বের সাহিত্যমহলে অত্যন্ত চর্চিত এক চরিত্র হারুকি মুরাকামি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের কিয়েটো শহরে জন্মগ্রহণ করলেও মুরাকামির বেড়ে ওঠা টোকিয়ো শহরে। টোকিয়োর ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই থিয়েটার এবং নাট্য-ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। কিংবদন্তি লেখককে শ্রদ্ধা জানিয়েই তাই এই উদ্যোগ নিয়েছে জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়টি।

তবে আলাদা করে কোনো লাইব্রেরি সেই অর্থে তৈরি হচ্ছে না। সুসুবিচি মেমোরিয়াল থিয়েটার হলের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি ভবনকে সম্পূর্ণ নতুন করে মেরামতের পর সেখানেই গড়ে উঠবে ওয়াসেদা ইন্টারন্যাশনাল হাউস অফ লিটারেচার। যার সহজ পরিচিতি হবে মুকারামি লাইব্রেরি। উল্লেখ্য, এই সুসুবিচি থিয়েটারেই জীবনের একটি বড় অধ্যায় কাটিয়েছেন কিংবদন্তি জাপানি সাহিত্যিক। মুরাকামির বই, অনুবাদ, নোটবুক এবং তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহের কয়েক হাজার ভিনাইল রেকর্ডও সংরক্ষিত হবে এই গ্রন্থাগারে।

এছাড়াও ২০১৯ সালে মুরাকামি নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহের সমস্ত বই-ই অনুদান হিসাবে দিয়ে দিয়েছিলেন ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চেয়েছিলেন ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় যেন হয়ে ওঠে সাহিত্যপ্রেমীদের ‘সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ’। সেইসব বইও আলাদা করে সংরক্ষিত থাকবে এই লাইব্রেরিতে।

গত বছরই এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। খ্যাতনামা জাপানি স্থপতি কেঙ্গো কুমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এই গ্রন্থাগারের নকশা তৈরির। গতবছরেই কুমা জানান, একদম অভিনব চেহারায় আসতে হতে চলেছে এই গ্রন্থাগার। প্রচলিত অন্যান্য গ্রন্থাগারের মতো নীরবতা বজায় থাকবে না সেখানে। বরং সৃষ্টি, আলোচনার পীঠস্থান হবে এই জায়গা। চা, কফি নিয়েই টেবিলে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যুক্তি-তর্কের খেলায় মেতে থাকতে পারবেন ছাত্র থেকে পর্যটক— সমস্তরকম মানুষেরাই।

করোনা পরিস্থিতির কারণে বেশ খানিকটা দেরিই হয়ে গেছে বলা চলে নির্মাণের কাজে। তা সত্ত্বেও চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যেই খুলে যাবে এই বিচিত্র গ্রন্থালয়। এমনটাই জানাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে পুরো কাজ শেষ হতে লাগবে আরও একবছর। কারণ ২০২২ সালের মধ্যে এই গ্রন্থাগারের মধ্যেই একটি ‘ক্যাট-ক্যাফে’ অন্তর্গত করার পরিকল্পনা করে রেখেছেন স্থপতি কেঙ্গো কুমা। যা বিশ্বের সমস্ত গ্রন্থাগারের থেকে আলাদা করে দেবে মুরাকামি লাইব্রেরিকে...

আরও পড়ুন
প্রথম ভারতীয় সাহিত্যিক হিসাবে জাঁ-জ্যাকস রুশো ফেলোশিপ পেলেন বাংলার মনোরঞ্জন ব্যাপারী

Powered by Froala Editor