মানচিত্র থেকে হারিয়ে গিয়েছে যেসব দেশ; ব্রিটিশ লেখকের কলমে অবাক-করা ইতিহাস

ছুটি পেলেই বিদেশে পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছে তো সকলেরই থাকে। তবে জানাশোনা দেশগুলোতে পর্যটকের ভিড় বেশি। একটু অন্য কোথাও গেলে কেমন হয়? ধরুন ছুটিতে যে দেশে গেলেন, তার নাম কুইলাম্বো অফ পালমার্স। অথবা, নিউট্রাল মরেসনেট। নাম শোনেননি নিশ্চই দেশগুলোর স্বাভাবিক। কারণ এখানে যেতে গেলে আপনাকে শুধু ভূগোলের উপর দিয়ে হাঁটলেই হবে না, হাঁটতে হবে ইতিহাসের উপর দিয়েও। কারণ আজ আর তাদের অস্তিত্ব তো নেইই, বরং খুব সামান্য কয়েক বছরের জন্যই টিকে ছিল এই দেশগুলি।

আসলে মানচিত্র জিনিসটাকে আমরা যেমন নিরেট বলে মনে করি, আদৌ তেমন সেটা নয়। কয়েক বছর, কয়েক মাস এমনকি কয়েক দিনের মধ্যেও তার অনেক পরিবর্তন ঘটে যায়। কখনও যেমন নতুন নতুন দেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে, তেমনই আবার অনেক দেশের অস্তিত্ব মুছেও যায়। তার মধ্যে রাজনৈতিক কারণ থাকে, প্রাকৃতিক কারণ থাকে। আবার নিছক কিছু অর্থহীন কারণেও অনেক দেশের অস্তিত্ব মুছে যায়।

ঠিক এমনই ৪৮টি দেশের কাহিনি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি বই। বইয়ের নাম ‘অ্যান অ্যাটলাস অফ এক্সটিংক্ট কান্ট্রিজ্’। লিখেছেন হাস্যকৌতুক রচনার জন্য বিখ্যাত গিদেওন ডেফো। তবে এই লেখা কোনো রম্য রচনা নয়। বরং রীতিমতো গবেষণা করে তিনি লিখেছেন এই বই। তবে তাতে বড়ো বড়ো যুদ্ধের ফলে হারিয়ে যাওয়া দেশগুলোর কোনো উল্লেখ নেই। এসব দেশের কথা তো সবারই কম বেশি জানা। ডেফো লিখেছেন সেইসব দেশের কথা, ইতিহাসে যাদের উল্লেখ প্রায় পাওয়াই যায় না।

কোনো দেশের অস্তিত্ব ছিল মাত্র ১০০ বছর, কোনোটার বা তার থেকেও কম। কেউ কেউ আবার নিজেদের মুদ্রা বা পোস্টাল স্ট্যাম্পও তৈরি করে ফেলেছিল। তেমন অনেক নমুনাও সংগ্রহ করেছেন ডেফো। তবে অবশ্যই প্রশ্ন থেকে যায়, ঠিক কী কারণে এইসব দেশের বিলুপ্তি ঘটল?

সমস্ত তথ্য জানতে গেলে অবশ্যই পড়তে হবে পুরো বইটি। তবে দুটো উদাহরণ দিয়ে একটু আভাস দেওয়া যেতে পারে। যেমন নিউট্রাল মরেসনেট দেশটির কথাই বলা যাক। নেপোলিয়ানের কাছ থেকে একটা জিঙ্কের খনি কিনেছিলেন এক ব্যবসায়ী। তারপর সেই বিরাট সাম্রাজ্যের পতনের পর কোনো দেশই আর এই খনি দাবি করেনি। এভাবেই বেলজিয়ামের পাশে গড়ে ওঠে একটি দেশ। কিন্তু ১০০ বছরের মধ্যেই সেখানে সমস্যা দেখা দেয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পত্তির অধিকার নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। আর তাতেই ঠিক হয়, কেউই এর উত্তরাধিকার দাবি করবেন না। ব্যাস। এভাবেই মৃত্যু হল একটি দেশের। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বেলজিয়াম এই এলাকা দখল করে।

অপর একটি দেশ কুইলাম্বো। আফ্রিকার এই দেশটিকে একসময় স্বাধীন করার কথা ভেবেছিল পর্তুগিজ সরকার। তাই সেখানে নিজস্ব মুদ্রা, ডাকটিকিটের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এই নবগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ঠিকঠাক পর্যালোচনা করার জন্য সামান্য নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল পর্তুগাল। এর মধ্যেই সেখানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আবার পরাধীন হয়ে পড়ে কুইলাম্বো। মাত্র কয়েক দশক অস্তিত্ব ছিল তার।

আরও পড়ুন
জনশূন্য ডালহৌসির ‘বইপাড়া’, বিক্রি না হওয়ায় দোকানই খুলছেন না বই-বিক্রেতারা

ইতিহাসে এভাবেই নানা সময় সীমানার পরিবর্তন ঘটে চলেছে। ডেফো মনে করেন, এই পরিবর্তন আসলে এক সীমানাহীন পৃথিবীর দিকেই নিয়ে যাবে আমাদের। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলবে পরিবর্তনও। ফলে ৩০ বছরের মধ্যেই এই বইয়ের আরেকটি সংস্করণ প্রকাশিত হবে বলে আশাবাদী তিনি। তবে সে সম্ভাবনা দূরে সরিয়ে রাখলেও, ইতিহাসে মুখ ঢাকতে কার না ভালো লাগে?

Powered by Froala Editor