জনশূন্য ডালহৌসির ‘বইপাড়া’, বিক্রি না হওয়ায় দোকানই খুলছেন না বই-বিক্রেতারা

কেসি দাসের মোড় পেরিয়ে ডালহৌসির দিকে এগোলেই চোখে পড়বে সার দিয়ে বইয়ের দোকান। ফুটের ওপরেই বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন অনেক বিক্রেতা। কলেজ স্ট্রিটের পর পুরনো বইয়ের বাজার বলতে গড়িয়াহাট আর এই মার্কেটের ছবিই ফুটে ওঠে সকলের মনে। চাইলেই মিনি ‘বইপাড়া’ হিসাবে ভেবে নেওয়া যায় এই জায়গাটাকে। কিন্তু লকডাউনে এখন একেবারেই ভিন্ন চেহারা ডালহৌসির। শোরগোল নেই। ভিড়ভাট্টাও নেই। অসুস্থ ছোট্ট বাচ্চার মতোই ধুঁকছে অফিসপাড়া। আর বইয়ের দোকানগুলো?

“আমাদের কি আর খাবারের দোকান আছে, যে মানুষ এসব দিনেও অবশ্যই খোঁজ করবে? লোকজন এমনিও কম আসছে। যারা আসছে তারা ১১টায় এসে ৪টে-৫টার মধ্যে চলে যাচ্ছে সব।” অফিসপাড়ার রাস্তায় বসা বই-বিক্রেতা ইনতেয়াজের গলায় এমনই খেদের সুর। আর হবে নাই বা কেন! বিক্রি নেই যে একাবারেই। তবুও আশায় আশায় বই নিয়ে হাজির হওয়া। “সারা দিনে একটা-দুটো বই বিক্রি হচ্ছে। কখনও তাও না। ১০০-২০০ টাকার বিক্রি। বই জমে যাচ্ছে বলে, কেনা দামও উঠছে না আর”। 

লকডাউনের মন্দার বাজারে সংসার চালানোও এক প্রকার দায় হয়ে পড়েছে এই দোকানিদের। উপার্জন জোগাতে তাই বইয়ের পাশাপাশি স্যানিটাইজার, মাস্ক নিয়েও বসছেন ইনতেয়াজ। যদি দু’ পয়সা আসে বেশি, সেই ভরসাতেই। দুটো মাস্ক বিক্রি হলে যাতায়াতের খরচটাও নাহয় পুষিয়ে যাবে। 

আরও পড়ুন
বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে বটতলা হয়ে কলেজ স্ট্রিটের দোকান – যেভাবে জন্ম নিল বইপাড়া

বিগত ২০ বছর ধরে এই ফুটপাথেই বই বিক্রি করছেন ইনতেয়াজ। তবে ২০ বছরের জীবনে এইরকম মন্দার মুখোমুখি হননি এর আগে কখনও। লকডাউনের সঙ্গে আমফানও ক্ষতি বাড়িয়ে দিয়ে গেছে। তবে যেহেতু ফুটেই প্লাস্টিক পেতে বসা, তাই খুব বেশি বই রেখে না যাওয়াও সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এই সম্পদগুলি।

গোটা মার্ক এঞ্জেলস বিঠি রোড এবং সিধো কানহো স্ট্রীটে এখন একমাত্র বইয়ের দোকান এটাই। কোনোমতে ইনতেয়াজ এই লড়াইটা চালিয়ে গেলেও বাকিরা অনেকেই হার মেনেছেন পরিস্থিতির কাছে। বইয়ের পাশাপাশি ঘাটতি মেটাতে হয়তো আর তুলে উঠতে পারেননি মাস্ক, স্যানিটাইজার। ক্ষতির ধাক্কা কাঁধে নিয়ে তাঁরা আর আসছেন না এখানে। ইনতেয়াজ জানান, অনেকেই বাড়িতে অন্য ব্যবসা করছে। কেউ ছোটো-খাটো কাজের সন্ধানে ব্যস্ত। অন্যদিকে তাঁদের অপেক্ষাতেই ফাঁকা পড়ে আছে লম্বা বাঁধানো ফুটপাথ। বিক্রি কমে যাওয়ায় ডালহৌসিতে আসছেন না অনেক হকারও। কলকাতার জমজামাট এই অফিসপাড়া মুষড়ে আছে অর্থনৈতিক মন্দাতেই...

আরও পড়ুন
দেশ-বিদেশের ক্রীড়াব্যক্তিত্বদের নিয়ে সুন্দরবন আর বইপাড়ার পাশে 'বাইচ'

Powered by Froala Editor

More From Author See More