দীর্ঘ দু’মাসের লকডাউন শেষে আজ খুলছে বইপাড়া

পুরনো গোলদীঘির সামনে অপ্রশস্ত প্রাচীন রাস্তা, একডাকে সবাই চেনেন কলেজ স্ট্রিট। তার দুপাশ থেকে বেরিয়ে গিয়েছে আরও দুটো রাস্তা, কলুটোলা স্ট্রিট এবং বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় স্ট্রিট। আয়তনে অপরিসর এই এলাকাটা বাংলা বইয়ের আঁতুড়ঘর। ছোটবড় প্রকাশকের বিরাট আয়োজন তো আছেই। আর বইপাড়ার বই বিক্রেতাদের কথা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। ব্যস্ত পথচারীর দিকে প্রত্যেকেরই সজাগ প্রশ্ন, 'কী বই লাগবে?'

না, দীর্ঘ দুমাস এই পরিচিত প্রশ্নটা শোনেনি রেলিংঘেরা ফুটপাত। দোকানে পরিচিত মানুষগুলো নেই, নেই ক্রেতার আনাগোনা। বইপাড়ার বইগুলোকে উল্টে-পাল্টে দেখেনি কেউ। আর তার মধ্যেই এসে পড়ল বিধ্বংসী আমফান। দুই মলাটের মধ্যে ছাপার হরফযুক্ত পাতাগুলো জানত না, তার অনিবার্য পরিণতি মিশে যাবে কলেজস্ট্রিটের হাঁটুভেজা জলে। তবে এই দুঃসময়েও যেন সামান্য আশার আলো দেখা যাচ্ছে। দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন।

দীর্ঘ দুমাসের লকডাউন কাটিয়ে অবশেষে খুলছে বইপাড়ার দোকানগুলো। দোকানিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আর আজ সোমবারই আবার সেই পরিচিত মানুষের দেখা পাবে পরিচিত রাস্তা, পরিচিত আঙুলের স্পর্শ পাবে বইগুলো। অবশ্য দোকান খুলবে লকডাউনের সমস্ত নিয়ম মেনেই। তাই দোকানিরা প্রত্যেকেই থাকবেন মাস্ক পরে। সঙ্গে গ্লাভসও পরতে পারেন। এমনকি ক্রেতারাও আগের মতো ভিড় করে বই দেখতে পারবেন না। তাঁদেরকে নিয়ম মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আজ অবশ্য বইপাড়ায় ছুটির দিন। ঈদের জন্য দোকান খুলবেন না অনেকেই। তবে মঙ্গলবার থেকে সব দোকান খুলবে বলেই মনে করছেন বইবিক্রেতা এবং প্রকাশকরা।

এতদিন পর এই সুখবরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে। তবে সেইসঙ্গে তিনি মনে করছেন, গণপরিবহন ব্যবস্থাকেও স্বাভাবিক হতে হবে। বইপাড়ার অনেক দোকানি যেমন আসেন দূর থেকে, তেমনই রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে পুরনো বই এসে পৌঁছয় এই এলাকায়। আর হৃৎপিণ্ডের মতো সেই বইয়ের স্রোতকে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে পৌঁছে দেয় কলেজস্ট্রিট। তাই পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হলে বইয়ের বাজার আবার আগের অবস্থায় ফেরত আসার সম্ভবনা কম।

কিন্তু সম্প্রতি আমফানের তাণ্ডবে দোকানগুলোর যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, তাতে উদ্বেগ ধরে রাখতে পারেননি দোকানিরা। কলেজস্ট্রিটের রাস্তায় জমা জলের মধ্যে পুরনো নতুন বই ভেসে বেড়াতে দেখেছি আমরা সকলেই। এমন অবস্থায় কার কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে উন্মুখ দোকানিরা প্রত্যেকেই। সেইসঙ্গে সেই ক্ষতির যন্ত্রণা প্রশমন করে যদি আবার নতুন করে ব্যবসা শুরু করা যায়, তাহলে উদ্বেগ খানিকটা কমতে পারে। করোনা এবং আমফানের এই যৌথ আক্রমণের পর তাই অবশেষে বইপাড়া খোলার খবর সত্যিই আনন্দের।

Powered by Froala Editor