সম্বল জমি-অর্থ-শ্রম, লকডাউনেই রাস্তা তৈরি করলেন পুরুলিয়ার গ্রামবাসীরা

এ-বছর পুরুলিয়ার ছবি একেবারে অন্যরকম। মার্চ থেকে মে মাস - এই সময়টা পুরুলিয়া ভরে থাকে মানুষে মানুষে। উৎসবের মরশুম চলে এই কয়েক মাস। দোল, গাজন, শিকার, করম পরবের মোড়কেই মেতে থাকে পলাশের দেশ। চলে ছৌ নাচের প্রস্তুতিও। কিন্তু লকডাউনে বন্ধ সবকিছুই। পর্যটন নির্ভর মানুষগুলোর জীবনযাত্রা থমকে গেছে হঠাৎ। এই অনির্দিষ্টকালীন অবসর আর কতদিন বয়ে বেড়ানো যায়? তাই নিজেরাই কাজ খুঁজে নিলেন। হাত লাগালেন গ্রামের রাস্তা তৈরিতে।

ঝালদার ১ নং ব্লকের কৃষ্ণপুর নতুনডি গ্রামের সঙ্গে মহকুমার সদরের যোগাযোগের প্রধান রাস্তা একটিই। আরো একটা রাস্তা থাকলেও, বেশ খানিকটা ঘুরতে হয় সে পথে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান এই রাস্তাটির অবস্থা রীতিমতো সংকটজনক। এতটাই সংকীর্ণ যে অ্যাম্বুলেন্সও যেতে পারে না এই পথে। চাষের কাজের জন্য গ্রামবাসীরা নিয়ে যেতে পারেন না ট্র্যাক্টর বা এই ধরনের বড়ো গাড়ি। আর বর্ষাকালের কথা তো ছেড়েই দেওয়া যায়। কার্যত দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে স্কুল কলেজ যাওয়া। প্রশাসনিক আধিকারিকদের বারবার অভিযোগ জানিয়েও তেমন লাভ হয়নি কোনো। তাই লকডাউনের অবসরে গ্রামবাসীরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিলেন সমস্যা সমাধান করার।

সম্প্রতি ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজন নিজেরাই ঠিক করেছিল রাস্তাটিকে সারিয়ে তোলার কথা। সামর্থ্যমতো কেউ অর্থ বা কেউ জমি দান করলেন কর্মযজ্ঞে। তারপরই শুরু হয় রাস্তা নির্মানের কাজ। কাজে হাত লাগালেন গ্রামবাসীরাই। ১৫ ফুট চওড়া এবং ২কিমি দীর্ঘ এই রাস্তার কাজ ইতিমধ্যেই এগিয়েছে অনেকটা। নতুনডি থেকে চাতামঘুটু অবধি যোগাযোগ ব্যবস্থা এতে অনেকটাই উপকৃত হবে, এ ব্যাপারে আশাবাদী গ্রামবাসীরা। এর পাশাপাশি তানাশি গ্রাম থেকে জজলং অবধি আরো একটি রাস্তা তৈরি উদ্যোগ নিয়েছেন সেখানকার গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি একটাই, পরবর্তীকালে যেন প্রশাসনিক স্বীকৃতি দেওয়া হয় এই দুটি রাস্তাকে। কোভিড-১৯ এর আতঙ্কে একদিকে সারা শহর জুজু হয়ে আছে ঘরে। অন্যদিকে, নিজেদের লড়াই এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন আদ্যন্ত সরল প্রান্তিক মানুষগুলি। পুরুলিয়ার মানুষগুলো এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অবসর সময় কাজে লাগাচ্ছেন ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। দশের একতায় হারিয়ে দিচ্ছেন দীর্ঘদিনের সমস্যাকে। নিজের চাষযোগ্য জমি, শ্রম দিয়ে ক’জনই বা পারে এমন উদ্যোগ নিতে?(

(ছবি - প্রতীকী)