এক মুহূর্তে বাষ্পে পরিণত হয়েছিল শরীর, ২ হাজার বছরের প্রাচীন দেহাবশেষ ঘিরে চাঞ্চল্য

প্রাণভয়ে ছুটতে ছুটতে একবার হয়তো পিছন ফিরে তাকিয়েছিলেন মানুষটি। আর তখনই টাল সামলাতে না পেরে উলটে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সমস্ত চামড়া-মাংস বাষ্পে (Vapor) পরিণত হয়। পড়ে থাকে শুধু কঙ্কালটা। হবে নাই বা কেন? ততক্ষণে যে শরীর ঢেকে ফেলেছে আগ্নেয়গিরির (Volcano) জ্বালামুখ থেকে বেরিয়ে আসা ছাই। আর তার উষ্ণতা অন্তত ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রায় ২ হাজার বছর আগে এইভাবেই প্রাণ হারিয়েছিলেন অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি। সম্প্রতি তাঁর কঙ্কাল আবিষ্কার করলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

রোমান ক্যালেন্ডারের পাতায় বছরটা ছিল ৭৯ খ্রিস্টাব্দ। দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থাকার পর সেইবছর হঠাৎ করে বিস্ফোরণে ফেটে পড়েছিল মাউন্ট ভিসুভিয়াস। মাউন্ট ভিসুভিয়াসের সেই অগ্ন্যুদগার রোমান সাম্রাজ্যের একটা বড়ো অংশ তছনছ করে দিয়েছিল। এই ঘটনার সবচেয়ে বেশি তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় পম্পেই শহর থেকে। তবে তৎকালীন বর্ণনা থেকে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল হারকিউলিয়ান শহরের। সেই হারকিউলিয়ান শহর থেকেই এবার পাওয়া গেল এই কঙ্কাল। প্রায় ১৪ বছর পর হারকিউলিয়ান শহর থেকে অগ্ন্যুৎপাতে মৃত কোনো ব্যক্তির দেহাংশ উদ্ধার করলেন গবেষকরা। তাও এমন এক মৃতদেহ, যার শরীরে অগ্ন্যুৎপাতের ভয়াবহ প্রভাব এখনও স্পষ্ট।

প্লিনির বর্ণনা থেকে জানা যায়, ভিসুভিয়াসের বিস্ফোরণে প্রথম কেঁপে উঠেছিল পম্পেই শহর। তবে প্রথমবারের অগ্ন্যুদ্গারে লাভার গতি খুব বেশি ছিল না। ঘণ্টায় মোটামুটি ৬০ কিলোমিটার বেগে নেমে এসেছিল লাভার স্রোত। প্লিনির নেতৃত্বেই তখন তৈরি হয় একটি উদ্ধারকারী দল। নৌকা নিয়ে তাঁরা রওয়ানা হন পম্পেই শহরের দিকে। তবে ততদূর পৌঁছতে পারেননি। হারকিউলান শহরে এসে গোটা বাহিনীটিই মারা যায়। এছাড়াও হারকিউলান শহরের বাসিন্দাদের প্রায় ৮০ শতাংশই প্রাণ হারিয়েছিলেন সেই ঘটনায়। অন্যদিকে পম্পেই শহরে প্রায় ২০ হাজার মানুষই পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন।

এতদিন পর্যন্ত হারকিউলান শহর থেকে যেসব প্রাচীন দেহাংশ উদ্ধার করা হয়েছিল, তা প্রায় সবই ছিল সেই হারিয়ে যাওয়া নৌবাহিনীর। তবে সদ্য পাওয়া কঙ্কালটির শরীরে সামরিক পোশাকের কোনো চিহ্ন নেই। সঙ্গে কিছু জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে। তাতে কিছু জামাকাপড় আর দৈনন্দিন ব্যবহারের সামগ্রী মিলেছে। গবেষকদের অনুমান, তিনি হারকিউলান শহরের কোনো বাসিন্দা ছিলেন। পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার মতো কিছুটা সময় তিনি পেয়েছিলেন। তার মধ্যেই দ্রুত কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে ছুটতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পালাতে পারেননি।

আরও পড়ুন
সঙ্গীতের ‘অণুপ্রেরণা’য় কাকা, তাঁর কঙ্কাল দিয়েই গিটার বানালেন মার্কিন যুবক!

মৃতদেহটির গায়ে মাংসের যেটুকু অবশেষ পাওয়া গিয়েছে, তা জমে কার্বনে পরিণত হয়েছে। বাকি জিনিসপত্রেও কার্বনের পরিমাণ যথেষ্ট। ফলে আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের কারণেই যে মৃত্যু হয়েছে, তাতে সন্দেহ থাকে না। আর শরীরের হাড়গুলির অবস্থান দেখে মনে হয়, শেষ মুহূর্তে পিছনদিকে তাকাতে গিয়েই ভারসাম্য হারিয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুমুখে একজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঠিক কী কী জিনিস ছিল, আপাতত সেটাই ঐতিহাসিকদের কাছে সবচেয়ে আগ্রহের বিষয়। এর থেকে সেই সময়ের রোমান সাম্রাজ্যের জীবনযাত্রার ছবিও জানা যাবে অনেকটা।

আরও পড়ুন
স্কটল্যান্ডের ১৩০০ বছরের প্রাচীন সমাধি থেকে উদ্ধার ১০টি কঙ্কাল

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কবর থেকে কঙ্কাল তুলে পরানো হয় নতুন পোশাক, নেওয়া হয় ফ্যামিলি ফটোগ্রাফও!